নিজস্ব প্রতিবেদন : এই রাজ্যে এযাবত যেসকল দরিদ্র বিধায়ক রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাঁকুড়া শালতোড়ার বছর সাঁইত্রিশের চন্দনা বাউড়ি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় ঘর থেকে কখনো ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতো স্বপ্ন না দেখলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে। বিজেপির হাত ধরে চন্দনা বাউড়ি কেবলমাত্র ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এমনটাই নয়, এর পাশাপাশি তিনি এই প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে বিধায়ক হয়েছেন।
বিধায়ক হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্ন-উত্তরের মাঝে জানতে পারেন একজন বিধায়ক হিসেবে তিনি কত টাকা বেতন পাবেন। আর সেই বেতনের কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ‘থ’ হয়ে যান। কারণ জীবনে এখনো পর্যন্ত তিনি যত টাকার সম্পত্তি করেছেন তার প্রায় তিনগুণ বেতন তিনি পাবেন এই বিধায়ক হওয়ার দরুন।
একজন বিধায়ক হওয়ার দরুন বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা মিলে পাওয়া যায় প্রায় ৮২ হাজার টাকা। প্রথম প্রথম এই এত্ত টাকা শুনে তিনি হতচকিত হয়ে পড়লেও পরে তিনি জানিয়েছেন এই টাকায় কি করবেন। মাসে প্রায় লাখের কাছাকাছি পাওয়া টাকা নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখছেন গ্রামের উন্নয়ণ করার। স্বপ্ন দেখছেন সেই টাকা সকলের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, “এত টাকা নিয়ে কি করব। আমার তো কিছু দরকার নেই। এই টাকা নিয়ে গ্রামের মানুষদের জন্য কাজ করতে চাই। আমাদের এখানে রাস্তা খারাপ। কোমর অবধি জল। বেতনের টাকা দিয়ে ওই রাস্তায় মোরাম দিয়ে যাই হোক কিছু একটা করে ঠিক চাই।”
চন্দনা বাউড়ি আরও জানিয়েছেন, গ্রামের আট-দশটা বাড়ি বাদে বাকি সবই কাঁচা। সরকার তো সেভাবে কিছু সাহায্য করে না। এখানে পাইপের পর পাইপ বসানো হয়েছে কিন্তু জল আসে না। বর্ষায় যাদের কাঁচা বাড়ি রয়েছে তাদের ত্রিপল দেবো ভাবছি। আর এই জল, রাস্তা এই সকল প্রাথমিক সমস্যাগুলি দূর করারটাই হলো প্রথম লক্ষ্য।
কিন্তু প্রশ্ন হলো নিজের কি করে চলবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের ঘর বানাচ্ছি। তাতেই দিন চলে যাবে। তবে ছেলেমেয়েদের জন্য একটু চিন্তা করে। তাহলেও এখানকার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েদের জন্য চিন্তাটা আরও একটু বেশি। আমার তিন তলা বাড়ি না হলেও চলবে, অন্ততপক্ষে গ্রামের মানুষগুলো বাঁচুক।
প্রসঙ্গত, নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভার বিধায়কদের কলকাতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করতে হয় বেতন তোলার জন্য। কিন্তু চন্দনা বাউড়ি এখনো পর্যন্ত সেই অ্যাকাউন্ট করে উঠতে পারেননি। শেষবার তিনি যখন বিধায়ক কোটায় কোয়ার্টার নিতে ফর্ম ফিলাপ করতে চান তখন তিনি এই কথা জানতে পারেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা জানতে পারায় অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়নি। তারপর লকডাউন। আর এই পরিস্থিতিতে তিনি আগামী দিনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন। আর সেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করানোর পর তিনি একসাথে সমস্ত টাকা পাবেন।
হিসাব করলে দেখা যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত ২ মাসের বেতনের দরুণ তিনি পাবেন ১ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকার কাছাকাছি। কিন্তু এই টাকায় গ্রামের রাস্তা সরানো যাবে না বলেও তিনি মনে করছেন। যে কারণে ওই রাস্তা সারানোর জন্য বাকি টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা যায় তার ব্যবস্থা তিনি করবেন বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যের সবথেকে দরিদ্র এই বিধায়ক জানিয়েছেন, ‘বাবা আমার আদর্শ, আমি উনার মতই হতে চাই’।