নিজস্ব প্রতিবেদন : একসময়ের তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড মুকুল রায় ২০১৭ সালে তৃণমূলের সাথে ২০ বছরের সম্পর্ক ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। আর এই বিজেপির ঘরে চার বছর কাটানোর পর ফের শুক্রবার বঙ্গ রাজনীতিকে চাণক্য মুকুল রায় তৃণমূল প্রত্যাবর্তন করলেন।
তবে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন করলেও কথায় আছে ধনুকের তীর আর মুখের কথা একবার বেরোলে আর ফেরানো যায় না। তবে রাজনৈতিক মহলে এই সকল মন্তব্য সকলে ভুলে যান সহজেই। তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে নরমপন্থী এবং ভোটের সময় কোনো কুকথা বলেননি বলে দলে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু এই মুকুল রায় বিজেপিতে থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। আর সেই সকল আক্রমণাত্মক মন্তব্যই তৃণমূলের ফেরার সাথে সাথেই ডিজিটাল দুনিয়ায় ঘোরাফেরা করছে।
১) বিশ্ববাংলা রাজ্য সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান নয়। বিশ্ব বাংলা লোগো মালিক হলেন অভিষেক। এই বিশ্ববাংলা যখন অনূর্ধ্ব ১৮ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় স্পন্সর করেছিল তখন মুকুল রায় তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এবং সেই ঘটনা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।
২) তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হলেও তৃণমূলে পাপ করেছেন এবং বিজেপিতে এসে তার প্রায়শ্চিত্ত করছেন। এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছিল মুকুল রায়ের মুখ থেকে। খড়্গপুরের এক জনসভায় মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘মমতার সব দুর্বলতা ঢেকে রেখে আমরা মমতাকে ‘মমতা’ করেছি। আজ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে সারা বাংলা ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাংলায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম না করা অবধি পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে না।’
৩) একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় মুকুল রায়কে সেই ভাবে আক্রমণ করতে দেখা যায়নি ঠিকই। তবে এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তিনি। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘এমন অশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী আর দেখেছেন? বলে দিলেন গান্ধীজির অনশন ভাঙাতে নাকি রবীন্দ্রনাথ জল নিয়ে গিয়েছিলেন। এত বড় অশিক্ষিত আর দেখিনি।’
৪) শিল্প ও কৃষি নিয়ে মুকুল রায়ের মন্তব্য ছিল, ‘মমতা বলেন কৃষি আর শিল্প হল হাসি আর খুশি। ‘হাসি’ তো কোথায় উড়ে গিয়েছে, ‘খুশি’ও আর নেই।’
৫) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মাথায় করে শিল্প আনবেন? এই প্রশ্নও করেছিলেন মুকুল রায়। ঠিকই বলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আগে যখন বুদ্ধবাবুরা বিদেশ যেতেন তখন মমতা কটাক্ষ করে বলতেন গরমকালে হাওয়া খেতে যাচ্ছে। আর এখন দেখি শিল্প আনতে মাঝেমধ্যেই মমতা বিদেশ যাচ্ছেন। আবার একা যাচ্ছেন না, সঙ্গে ৪০ থেকে ৪২ জন লোককে নিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ অফিসারকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন? উনি কি মাথায় করে শিল্প আনবেন?’
৬) তৃণমূলের রামনবমী নিয়েও প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কে। মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘তৃণমূল কখনও রামনবমী করেনি। হঠাৎ কেন করল? পরিকল্পিত অশান্তি তৈরি করার জন্য’।
৭) মেট্রো ডেয়ারির দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধে ছিলেন মুকুল রায়। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘মেট্রো ডেয়ারি বিক্রি করে মমতার দল কত টাকা কাটমানি খেয়েছে, তার বিচার হোক। সবথেকে বড় বিলগ্নিকরণের মাস্টার মমতা। উনি বলুন কত টাকা খেয়েছে তৃণমূল?’
৮) সম্প্রতি একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছিলেন মুকুল রায়। ভোটের সময় প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমি তো বলবো শুভেন্দুর চেয়ে মুকুল অনেক ভালো।’ এমনকি মুকুল রায়কে কেন কৃষ্ণনগর উত্তরে টিকিট দেওয়া হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই সকল প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মুকুল রায় বলেছিলেন, ‘আমি এমন অনেক কিছুই শুনেছি। জবাব দিই না, দেব-ও না। মমতা ব্যানার্জির মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’
৯) সিপিআইএম আর মমতা, এই দুইয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই এমনটাও বলতে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কে।
১০) ‘ডেঙ্গিতে মানুষ মরছে, আর নাচা-গানা-খাওয়া, ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ এই প্রসঙ্গে তিনি সিপিআইএমের ২০০৭ সালের ঘটনাকে সংযুক্ত করে বলেছিলেন, ‘আজও সেই একই দৃশ্য। শুধু মানুষটা পাল্টে গিয়েছে।’