নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজনৈতিক মহলের একাংশের তাকে বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য বলে থাকেন। এই বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য মুকুল রায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারে রয়েছে একাধিক উত্থান পতন। মুকুল রায়ের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল কংগ্রেসের হাত ধরে একজন কংগ্রেস যুব নেতা হিসাবে। তারপর তিনি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন। তবে তৃণমূলের সাথে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপিতে যোগ এবং বিজেপিতে প্রায় ৪ বছর কাটানোর পর পুনরায় তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন।
মুকুল রায়ের যখন কংগ্রেসের যুব নেতা ছিলেন সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন যুব নেত্রী। তবে সে সময় মুকুল রায় দলের কোনো বড় পদ পাননি। কিন্তু ভিড়ের মাঝে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তারপর যখন ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সময় অগ্রভাগে দেখা গিয়েছিল এই মুকুল রায়কেই। তার হাত ধরেই তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হলেও দলের সর্বেসর্বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়ায় মমতাকে নেত্রী মেনে সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন তিনি।
দল গঠন হওয়ার পর ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জগদ্দল থেকে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে তিনি পরাজিত হওয়ায় তারপর থেকে আর তিনি ভোটে দাঁড়ান নি। বরং দলের সংগঠন তৈরি করার দায়িত্ব কাঁধে নেন। ২০০৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করেন। ওই বছরই তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হন। ২০১২ সালের ২০ মার্চ সেই সাংসদের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় তিনি সাংসদ হিসাবে মনোনীত হন। এর পরেই তিনি কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী এবং রেল মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
তবে ২০১৫ সাল থেকে তৃণমূলে তার গুরুত্ব কমতে থাকায় এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মনোমালিন্যের খবর সামনে আসার পর থেকেই দলের সাথে দূরত্ব তৈরি হলে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি তৃণমূল ত্যাগ করেন। তারপরেই ১১ অক্টোবর রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়ে দেন। এরপর দীর্ঘ টালবাহানা শেষে ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন।
তবে বিজেপিতে যোগ দিলেও প্রথমদিকে স্বস্তি মেলেনি তার। দলের সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাথে তার সবসময়ই একটা দূরত্ব লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে এরপর ধীরে ধীরে তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। বিজেপির ২ সাংসদ থেকে ১৮ সাংসদে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব মোদি অমিত শাহরা মুকুল রায়কেই দেন।
পুরস্কার স্বরূপ মুকুল রায় ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে আসীন হন। যদিও সর্বভারতীয় পদ পেলেও জাতীয় স্তরে তাকে সেভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি। একইভাবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ভোটের আগে থেকেই তাকে নিষ্ক্রিয় লক্ষ্য করা যায়। বিজেপি তাকে কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থী করে। সেখান থেকে তিনি প্রথমবার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করলেও দলের সাথে তার যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল প্রতিটি পদক্ষেপে। আর এই সকল ঘটনার শেষেই একুশের ১১ জুন বিজেপি ছেড়ে পুনরায় তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন করলেন।