নিজস্ব প্রতিবেদন : লাইমলাইটে যারা থাকেন তাদের জীবনটা সত্যিই অন্যরকম হয়। ইনাদেরকে আমরা সেলিব্রিটি বলি, রুপোলী আলোয় এদেরকে বিচার করি। কিন্তু এদের রূপালী আলোর পিছনে একটা অন্ধকার থাকে ঠিক যেমন থাকে প্রদীপের তলায়!
প্রকৃতপক্ষে একজন সাধারণ মানুষের থেকে এই মানুষগুলি অনেক বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। ইনারা চিরকালই ফ্যান, ফলোয়ার্স আর গ্ল্যামার জগতে বাস করেন। তাই কাজ না পাওয়া, লাইমলাইটে থাকতে না পারা, ঠিকঠাকমতো সিনেমার স্ক্রিপ্ট না পাওয়া, ঠিক মত চরিত্রে কাজ করতে না পারা, চান্স না পাওয়া ও ফলোযার কমে যাওয়া এই সবগুলো ইনাদেরকে আঘাত করে। লাইমলাইটে থাকতে না পারলে এদের মধ্যে কাজ করে হতাশাবোধ। আর সেই থেকেই একটার পর একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত।
এই গ্ল্যামার জগতের ১৩ জন তারকা, যাদের মৃত্যুর কারণ রহস্যাবৃত।
১) সুশান্ত সিংহ রাজপুত : ১৪ই জুন ২০২০ মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে অভিনেতার গলায় দড়ি নেওয়া অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়। ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা পান। এরপর ‘কাই পো চে’, ‘পিকে’, ‘ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘কেদারনাথ’ এই সিনেমাগুলিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন এবং সাফল্য লাভ করেছিলেন। পুলিশের ময়না তদন্তের রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণে শ্বাসরোধের ফলেই অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার ঘর থেকে কোন সুইসাইড-নোট মেলেনি। অনেকেই বলছেন এটি আত্মহত্যা নয় এটি খুন।
২) শ্রীদেবী : বলিউডের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যু হয় ২০১৮ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি। দুবাইয়ের একটি সাততারা হোটেলের বাথটবে তাকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তার! কিন্তু বাস্তবে স্বল্প পরিমাণ জলে ডুবে কেউ কীভাবে মারা যেতে পারেন! সেবারও খুনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু কপূর পরিবার সবটাকেই কুৎসা বলে রটিয়ে দেয়।
৩) দিব্যা ভারতী : বলিউডে খুব বেশি কাজ না করলেও এক বছরে তিনি এক ডজন ছবি করেছিলেন। এখন অব্দি কেউ ভাঙতে পারেনি। ১৯৯৩ সালের ৭ই এপ্রিল নিজের ফ্ল্যাট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তার।
অথচ ওই দিনই তাদের বাড়ির ফ্ল্যাটে ফ্যাশন ডিজাইনার বন্ধুবান্ধব নিয়ে রাত অবধি পার্টি চলছিল। এরকম একটি সময় বাড়ির ব্যালকনি থেকে পড়ে যান দিব্যা! কীভাবে এটি সম্ভব যেখানে বাড়ি ভর্তি লোক ছিল? অনেকেই বলেছিলেন এটি খুন। তার মৃত্যুর পিছনে তার স্বামী প্রযোজক সাজিদ নাদিওয়ালার হাত থাকতে পারে বলে অনেকের সন্দেহ করেছিলেন। বছরের পর বছর তদন্ত চলে কিন্তু প্রমাণ মেলে না। পরিবার থেকে বলা হয়েছিল টাল সামলাতে না পেরে ব্যালকনি থেকে পড়ে যান তিনি।
৪) পারভিন ববি : ১৯৮০ বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী পারভিন। এই অভিনেত্রীর মৃত্যু সত্যিই এক বিরাট বড় রহস্য। ইনি কবে মারা যান এবং কীভাবে মারা যান তা কেউ জানে না! হ্যাঁ তার ফ্ল্যাটের দরজায় প্রতিদিন খবরের কাগজ আর দুধের প্যাকেট জমছিল দিনের পর দিন প্রতিবেশীরাই পুলিশকে খবর দেন।তারপর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে অভিনেত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
৫) সিল্ক স্মিতা : আইটেম গার্ল থেকে অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন তিনি।জীবনের অনেক কঠিন পথ পেরিয়ে একদিন মুম্বাইয়ে নিজের আবাসনে আত্মহত্যা করেন। এই আত্মহত্যার কারণ কী ছিল তা আজও জানা যায়নি।
৬) গুরু দত্ত : বিখ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক ছিলেন তিনি। মারা যান মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। ‘কাগজ কে ফুল’ খ্যাত এই অভিনেতা পরিচালক মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করার ফলে মারা যান। অথচ মৃত্যুর আগের দিনও ছিলেন তিনি খোশমেজাজে। তার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা নাকি ভুলবশত ওষুধের ওভারডোজ নাকি অন্য কোনো কারণ তা আজও জানা যায়নি।
৭) জিয়া খান : জিয়া খান যখন আত্মহত্যা করেন তখন তাঁর সময়ের বয়ফ্রেন্ড সুরাজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। আত্মহত্যা করার সময় তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। জিয়ার মা বলেন পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে সে এই কাজ করেছেন। জিয়ার ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছিল সুইসাইড-নোট।
৮) অর্চানা পান্ডে : বিখ্যাত মডেল অর্চনার নিজেরই ফ্ল্যাটে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। সুইসাইড-নোটে তিনি তার বয়ফ্রেন্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।
৯) নাফিসা জোসেফ : ২০০৪ সালের ২৯ শে জুলাই নাফিসার মৃত্যু হয়। মুম্বাইয়ে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। প্রখ্যাত ব্যবসায়ী গৌতম খান্দু যার সঙ্গে তার বিয়ের কথা ভেঙে যাওয়ার পরই তিনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তার পরে এই পরিণতি।
১০) কুলজিৎ রণধাওয়া : ২০০৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এই মডেলের মৃত্যু হয়। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। হিপ হিপ হুররে, কোহিনুরের মতো জনপ্রিয় শো’তে ছিলেন তিনি। সুইসাইড নোটে নিজের মানসিক চাপের কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি।
১১) বিবেকা বাবাজি : ভারতের অন্যতম সেরা মডেল বিবেকা আত্মহত্যা করেছিলেন গলায় দড়ি দিয়ে। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায় যেখানে লেখা ছিল ‘I kill’। তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলার কারনেই এই কাজটি করেছিলেন এমনটাই অনুমান।
১২) কুনাল সিংহ : ‘দিল হি দিল ম্যায়’ ছবির অভিনেতা তিনি। ইনিও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। যদিও অভিনেতার বাবার বক্তব্য ছিল এটি আত্মহত্যা নয় খুন।
১৩) মনমোহন দেশাই : অমর আকবর এন্টনি, কুলি, ধরমবির-এর মত সুপার হিট হিন্দি ছবির পরিচালক ছিলেন মনমোহন দেশাই। একদিন হঠাৎই নিজের ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য ছিল ফিল্ম ক্যারিয়ারে অসাফল্যের জন্যই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আবার অনেকেই বলেছেন যে পিঠের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরেই নাকি তিনি এই কাজ করেন! কিন্তু কী কারণে তিনি আসলেই কাজ করেছিলেন তা আজও কেউ জানে না!