নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় ক্রীড়া জগতের নক্ষত্র পতন। কিংবদন্তি অ্যাথলিট ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিং জীবনযুদ্ধে ৯১ বছর বয়সে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ হার মানেন। স্ত্রীর মৃত্যুর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় চণ্ডীগড়ের পিজিআই হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
মিলখা সিং-এর জীবনের এক একটা উক্তি বর্ষার তীব্র জোরালো ফোঁটার মত গায়ে বাঁধে। বদলে দেয় মানুষের জীবনাদর্শকেই। তাঁরই উক্তি ‘আপনি জীবনে যে কোনও কিছু অর্জন করতে পারেন। এটা নির্ভর করে আপনি কতটা মরিয়া তার উপর।’ যে কারণে এই মিলখা সিংকে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের সাফল্য দিয়ে বিচার করা যায় না। মিলখা নিজেই একটা আদর্শ, মিলখা নিজেই মোটিভেশনের প্রতিরূপ।
তবে এই উড়ন্ত শিখের কেরিয়ার সাফল্য এবং ব্যর্থতা এই দুইয়ের মিশ্রণেই সমৃদ্ধ। অলিম্পিকে মিলখা সিং তিনবার অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে এই তিন বারের মধ্যে একবারও তিনি পদক আনতে সক্ষম হননি। কিন্তু পদক আনতে সক্ষম না হলেও একজন ভারতীয় হিসাবে নজির তৈরি করেছিলেন বিশ্বের সামনে। আর এই নজির তৈরি করার জন্যই তাকে একজন ভারতীয় হিসাবে কেউ কোনদিন ভুলবেন না।
১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে প্রথম বার তিনি অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই বছর অভিজ্ঞতার অভাবে সাফল্য আসেনি।
১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে সামান্য জন্য পদক হাতছাড়া হয়। চতুর্থ স্থানাধিকারী হিসাবে ২০০ মিটার দৌড় শেষ করতে হয় মিলখা সিংকে। প্রথম থেকে লিড দিলেও পদক হাতছাড়া হওয়ায় ভারতীয় ক্রীড়ায় এই ঘটনা আজও শোকগাঁথা হয়ে রয়েছে।
১৯৬৪ সালের টোকিও অলিম্পিকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। পরপর তিন বছর অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করেন এই ‘উড়ন্ত শিখ’।
তবে অলিম্পিকে তিন তিনবার অংশগ্রহণ করে হাতে পদক না এলেও তিনি জাতীয় স্তরে যে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন সেই রেকর্ড অক্ষুন্ন থাকে ৪০ বছর। রোম অলিম্পিকে ৪০০ মিটার দৌড় শেষ করতে তিনি সময় নিয়েছিলেন ৪৫.৭৩ সেকেন্ড।
অলিম্পিকে সাফল্য না পেলেও মিলখা সিংয়ের নজরকাড়া সাফল্য রয়েছে এশিয়ান গেমসে। এই প্রতিযোগিতায় তিনি চারটি সোনা জিতেছিলেন। ১৯৫৮ সালের টোকিও এশিয়ান গেমসে ২০০ এবং ৪০০ মিটারে সোনা জিতেছিলেন। ১৯৬২ সালের জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ৪০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতেছিলেন।
কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম কোন ভারতীয় হিসেবে দেশের হয়ে এসো না এনে দিয়েছিলেন এই মিলখা সিং। স্বাধীন ভারতে তিনিই প্রথম কোনো অ্যাথলিট যিনি সোনা জিতেছিলেন। ১৯৫৮ সালের কার্ডিফে ৪৪০ মিটার দৌড়ে সোনা পেয়েছিলেন তিনি। তিনি ১৯৫৮ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছিলেন।