নিজস্ব প্রতিবেদন : দিন কয়েক ধরেই আলোচনায় উঠে আসা নয়ডার টুইন টাওয়ার রবিবার দুপুর বেলা একটি বোতাম টিপে মাত্র ৯ সেকেন্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। এই টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার ফলে ভারতে তা ইতিহাস তৈরি করেছে। কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু এই বিল্ডিং ৩৫০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই বিল্ডিং নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করার জন্য ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ভেঙ্গে ফেলার এই প্রক্রিয়া সফল হওয়ার পিছনে রয়েছেন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার চেতন দত্ত। তবে এই চেতন দত্ত বাদ দিয়েও যুক্ত ছিলেন আরও এক তরতাজা বাঙালি যুবক ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল ভৌমিক। প্রচারে খুব একটা না এলেও এই মৃণাল ভৌমিক এই প্রজেক্টের সঙ্গে অতপ্রতভাবে যুক্ত।
মৃণাল ভৌমিক হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাসিন্দা। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার লক্ষ্যাকুড়ির চাউল্যাকুড়ি গ্রাম থেকে নয়ডার এখন নায়ক তিনি। তিনি বরাবর মুখের মিষ্টি হাসি দিয়ে প্রত্যেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে রাখতে প্রস্তুত। ভাঙ্গা গড়ার এই খেলায় কখনো কিছু ভাঙতে না শিখলেও এই ৪০ তলা বিল্ডিং ভাঙার অন্যতম কারিগর তিনি।
মৃণাল ভৌমক আইআইটি মাদ্রাজ থেকে সিভিল আর্থকুইক নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বি.টেক. করার পর GATE দিয়ে NIT Rourkela থেকে M.Tech করেছেন। তারপর এখন IIT MADRAS থেকে PhD করছেন। পাশাপাশি Prime Minister’s Research Fellowship scheme -এ সিলেক্টও হয়েছে। এখন civil Earthquake এর উপর রিসার্চ করছেন। নয়ডার এই বিশাল বিল্ডিং ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার টিমে যে চারজন আইআইটি মাদ্রাজের সদস্য ছিলেন তার মধ্যে একজন হলেন মৃণাল ভৌমিক।
মৃনাল ভৌমিক BanglaXp কে ফোন মারফত দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “এই বিল্ডিংয়ের একদিকে ৯ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে বসতি আর অন্যদিকে ৪ মিটার দূরেই তেল ও গ্যাসের পাইপ লাইন, যা সারা দিল্লি জুড়ে তেল ও গ্যাস সাপ্লাই হচ্ছে। এত বড় বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়লে পাশাপাশি মানুষের কি ক্ষতি হবে তার মেজারমেন্টের গুরুদায়িত্ব সামলানো এবং সাফল্যের সঙ্গে তা করা রীতিমত কঠিন।”
তিনি আরও জানান, “এটি ছিল একটা দলগত কাজ। এতে ভারতীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকার আইআইটি রুরকি এবং আইআইটি মাদ্রাজ যুক্ত ছিল। আমি আইআইটি মাদ্রাজ থেকে টিমের সঙ্গে ছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রবিবার পুরো বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলার আগে প্রায় চার মাস আগে থেকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার কাজ করা হয়েছিল। এই টুইন টাওয়ারের তিনটি ফ্লোরে বিস্ফোরক লাগিয়ে দেখা হয়েছিল পুরো বিল্ডিং ভেঙে ফেলতে কত পরিমাণ বিস্ফোরক লাগবে। আর বিস্ফোরণে সৃষ্টি হওয়া কম্পনের ফলে চারপাশে থাকা বিল্ডিং সহ নানা নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়। তার পর পুরো বিল্ডিং প্রতিটি কলাম লাগানো হয় প্রায় ৩৫০০ কেজি বিস্ফোরক।”