মাসে ৪৫০০ টাকাতেই বাজিমাত, দেশের প্রভাবশালী মহিলা হয়ে উঠলেন মাতিলদা

SHARMISTHA CHATTERJEE

Published on:

Advertisements

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : মনের জোর আর লড়াকু মনোভাবের দ্বারা যে অসাধ্য সাধন করা যায় তা নিজের কাজকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়ে প্রমাণ করেছেন ওড়িশার এক আশাকর্মী। নিজের অল্প ক্ষেত্রের মধ্যেও লড়াইটা তিনি চালিয়ে গিয়েছেন বহুদিন ধরে।

Advertisements

প্রতি বছর দেশের প্রভাবশালী মহিলাদের একটা তালিকা প্রকাশ করে থাকে ফোর্বস ইন্ডিয়া। সেই তালিকায় এবার জায়গা করে নিলেন ওড়িশার এক আদিবাসী মহিলা তথা আশাকর্মী মাতিলদা কুল্লু।যেখানে আন্তর্জাতিক স্তরের ওই তালিকাটিতে জায়গা পেয়েছে ব্যাংকার অরুন্ধতী ভট্টাচার্য, অভিনেত্রী রসিকা দুগগলের মতো প্রভাবশালী মহিলারা সেই জায়গায় একজন সাধারণ আশাকর্মী হয়ে নিজের স্বল্প পরিসরের মধ্যে লড়াই জিতে নিয়েছেন মাতিলদা কুল্লু।

Advertisements

ইচ্ছাশক্তির দ্বারা নিজের কাজকে যে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া যায় তাই তিনি প্রমাণ করেছেন। পেশাগত দিক দিয়ে তিনি একজন আশাকর্মী। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার গর্গডবহল গ্রামে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। তাঁর লড়াইটা শুরু হয়েছিল গ্রাম থেকেই।

Advertisements

ওই গ্রামটিতে মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস, কালো জাদু নিয়ে প্রবল বিশ্বাস ছিল। গ্রামের মানুষের মধ্যে গোড়া থেকেই ছিল। এত বধ্বমূল ভাবে গ্রামবাসীদের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস বিরাজ করতো যে তা থেকে বের করা খুবই কষ্টের কাজ ছিল। কিন্তু ওই আশাকর্মী নিজের চ্যালেঞ্জিং মনোভাব নিয়ে কাজে নিয়োজিত হয়ে যান। যতই প্রতিকূলতা আসুক সে তার হাল ছেড়ে দেয়নি।

ওই আশাকর্মীর কথা অনুযায়ী, ওই গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলেও তারা হাসপাতালে যাওয়ার পরিবর্তে ওঝার কাছে যাওয়াটাকে বেশি ঠিকঠাক বলে মনে করতো। এমনকি গ্রামের মধ্যে জাতপাত নিয়েও যথেষ্ট দ্বন্দ্ব ছিল। ওই মহিলা যখন দায়িত্ব নিতে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন প্রথম প্রথম বোঝা তো দূরের কথা তাঁর ওপরেই সবাই উত্ত্যক্ত হয়ে যেত।তাই পরিস্থিতি ততোটা সহজ মোটেই ছিল না।

সারা ওড়িশা জুড়ে প্রায় ৪৭ হাজার আশাকর্মী থাকলেও একমাত্র মতিলদা দায়িত্ব সহকারে সমস্ত দায়িত্ব সামলাতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের কাজ থেকে শুরু করে, সদ্যজাতদের খোঁজ নেওয়া, স্তন্যপানের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো সব কাজ একা হাতে সামলাতেন তিনি। বছরের পর বছর ধরে এই মানুষের সেবায় কোনো স্বার্থ ছাড়াও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন মাতিলদা। অবশেষে মানুষের মন থেকে অন্ধকার মুছে দিয়ে আলোর ছটায় ভরিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি। এই কর্মব্রতী জয়ী হয়েছেন।

মাসিক মাত্র ৪৫০০ টাকার বিনিময়ে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা করোনা সময়কালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে টীকাকরনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতন করে গেছেন।

এত অল্প পারিশ্রমিকে এইভাবে দিন রাত এক করে পরের স্বার্থে পরিশ্রম করেই তিনি আন্তর্জাতিক ফোর্বস ম্যাগাজিনে নাম তুলে নিয়ে দেশকে গর্বিত করেছেন।

Advertisements