লাল্টু : রেল পরিষেবাকে ভারতের গণপরিবহনের মেরুদন্ড বলা হয়ে থাকে। বছরের প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ এই রেল পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে ট্রেন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। কারণ এই স্টেশনেই ট্রেন এসে দাঁড়ায় এবং সেখান থেকেই যাত্রীদের উঠানামা করতে হয়। তবে জানেন কি, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে কোন স্টেশন না থাকলেও বছরে একদিন প্রতিটি ট্রেন স্টপেজ দেয়। এর পিছনে রয়েছে অবাক করা কারণ।
প্রতিবছর বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত দুবরাজপুর পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে আয়োজিত হয় আলম বাবার উরস। ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং অন্ডাল-সাঁইথিয়া রেল লাইনের পাশেই রয়েছে এই শতাব্দী প্রাচীন আলম বাবার মাজার। গত দু’বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলার আয়োজন করার ক্ষেত্রে অনুমতির দেওয়া না হলেও এই বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় মেলার আয়োজন করা হয়।
প্রতিবছর আষাঢ় মাসের চতুর্থ শুক্রবার এই মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। এখানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বাংলাদেশ থেকেও পূর্ণার্থীদের আগমন ঘটে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের প্রার্থনা ও আলম বাবার আশীর্বাদ নিতে এখানে আসেন এবং চাদর চড়ান। এই বছর মেলার আয়োজন হতেই আগের ছন্দেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
এই মেলাকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর আলম বাবা মাজার সংলগ্ন রেল লাইনে স্টেশন না থাকা সত্ত্বেও ট্রেন দাঁড়ায়। বছরে একদিন এই রুটে চলাচল করা প্রতিটি লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেন স্টপেজ দেয়। বছরের পর বছর ধরে একইভাবে এখানে স্টপেজ দিয়ে আসছে এই সকল ট্রেন, তবে তা কেবলমাত্র বছরে একদিন।
আলম বাবা মেলা কমিটির সদস্য শেখ ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, বছরের পর বছর ধরে আষাঢ় মাসের চতুর্থ শুক্রবার এখানে এই মেলার আয়োজন তারা দেখে আসছেন। আর এই মেলার কারণেই প্রতিবছর এখানে একদিনের জন্য স্টপেজ দেয় লোকাল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন।
লোকাল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন স্টপেজ দেওয়ানোর জন্য লাইনের পাশে ধর্মীয় পতাকা দেখানো হয়। সেই পতাকা দেখেই স্টপেজ দেওয়া এবং ফের ট্রেন ছেড়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। আলম বাবা মাজারের খাদিম মহঃ পিরু শা জানিয়েছেন, দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসার কারণে এই দিনটিতে এখানে ট্রেনের স্টপেজ দেওয়া হয়। বাউল ফকির থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষ তাদের মনষ্কামনা পূরণের জন্য এখানে এসে থাকেন।