নিজস্ব প্রতিবেদন : আইন এনেও তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, ভারতে এমন ঘটনা প্রথম নয়। তবে এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষি আইন (farmer law) প্রত্যাহার করার যে ঘোষণা করেন তা বিরল না হলেও বেনজির। তবে এদিন হঠাৎ করে এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে, শুরু হয়েছে একাধিক জল্পনা। দীর্ঘ এক বছর ধরে যে সকল কৃষকরা আন্দোলন (farmer protest) চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের ঘুম না এলেও কি জন্য হঠাৎ কেন্দ্র সরকার এমন পদক্ষেপ নিলো।
এদিনের এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে একাধিক সম্ভাব্য কারণ। শুরু হয়েছে জল্পনা। এই সকল জল্পনা এবং সম্ভাব্য কারণের মধ্যে পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা।
১) কেন্দ্রের তরফ থেকে বারংবার দাবি করা হয়ে আসছে দেশের ৯০ শতাংশ ছোট কৃষকদের কথা মাথায় রেখেই এই আইন আনা হয়েছিল। যে কারণে আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আক্ষেপের সুরে প্রধানমন্ত্রী জানান, “কৃষকদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতিতে আমরা পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করছি। ছোট কৃষকদের উন্নতির জন্য, তাঁরা আরও শক্তি পাক, সেটা নিশ্চিত করার জন্য তিনটি কৃষি আইন আনা হয়েছিল। কিন্তু, এই প্রদীপের আলোর মতো সত্য আমরা কিছু কৃষককে বোঝাতে পারিনি।হয়তো আমারই চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল।”
এই আক্ষেপ প্রকাশের পাশাপাশি যারা এই কৃষি আইন সমর্থন করেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কৃষি আইন ক্ষুদ্র কৃষকদের কথা মাথায় রেখেই আনা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন।
২) কৃষকদের একাংশ থেকে শুরু করে বিরোধীরা বারংবার অভিযোগ তুলেছেন, কেন্দ্রীয় তরফ থেকে পাস করা নতুন কৃষি আইন কর্পোরেট সংস্থাগুলির স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এদিন এই কৃষি আইন বাতিল করে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি সততার সঙ্গে কৃষকদের ভালো করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী যখন এই কৃষি আইন বাতিল করেন তখন তিনি এটা বোঝাতেই বলেন, “আমাদের সরকার ছোট কৃষকদের কথা ভেবে, দেশের কথা ভেবে, গ্রাম ও গরিবদের উন্নতির কথা ভেবে পূর্ণ সততার সঙ্গে এই আইন এনেছিল। কিন্তু এই সহজ কথা আমাদের হাজার চেষ্টার পরও আমরা কৃষককে বোঝাতে পারিনি। অল্প সংখ্যক কৃষক এর বিরোধিতা করেন।” তবে সেই অল্পসংখ্যক কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এদিন বলতে শোনা যায়, “সেটাই (যারা বিরোধিতা করেছেন) আমাদের কাছে জরুরি।”
৩) গত সাত বছরের বিজেপি সরকারের রাজত্বে সবচেয়ে বেশি সরকারের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এসেছে সেগুলি হল ফ্যাসিস্ট, বিরোধীদের তোলা অভিযোগকে গুরুত্ব না দেওয়া, একনায়ক ইত্যাদি। রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষি আইন বাতিল করার পদক্ষেপ এই সকল অভিযোগ ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করলো কেন্দ্র সরকার।
৪) কেন্দ্র সরকার যখন সাড়ম্বরে দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ উদযাপন করছে সেই সময় রাজধানীতে কৃষকদের বুক চিতিয়ে আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে ভালোমতোই ধাক্কা দিয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে হাজার আলোচনা করেও যখন কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি সেই সময় মোটামুটিভাবে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আইন প্রত্যাহার না করা হলে কৃষকরা আর পিছু হঁটবেন না। যে কারণে ভাবমূর্তি ফেরাতে কেন্দ্র সরকারের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৫) রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা এই আইন প্রত্যাহারের প্রধান এবং মূল কারণ হিসাবে মনে করছেন আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। বিশেষ করে আসন্ন এই সকল রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে কৃষকদের এই আন্দোলন পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে পারে এই আশঙ্কা তৈরি হয়।
আন্দোলনরত কৃষকদের অধিকাংশ পাঞ্জাব এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এমত অবস্থায় আশঙ্কা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি। যদিও পাঞ্জাবে বিজেপি বরাবরই দুর্বল। সম্ভবত এই সকল কারণেও বিজেপি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলির দিকে তাকিয়ে আর ঝুঁকি নিতে পারলো না।