হিমাদ্রি মন্ডল : গতবছর ভয়ঙ্কর করোনা পরিস্থিতির মাঝে হঠাৎ জ্বলে ওঠে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকা। চীনের আগ্রাসনকে রুখে দিতে ১৫ জুন সমস্ত রকম প্রতিকূল মুহূর্তকে উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় সেনারা। সেই দলে ছিলেন বীরভূমের মহঃবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের রাজেশ ওরাংও। চীন সেনাদের সাথে সেই লড়াইয়ে পর দিন শহীদ হন তিনি। আর দেখতে দেখতে তার শহীদ হওয়া বছর ঘুরে গেল। আর এই বছর ঘুরলেও এখনো রাজেশ ওরাং-এর পরিবারের সদস্যরা বদলার আগুনে জ্বলছেন। তাদের দাবি ‘যোগ্য জবাব তো দিতেই হবে’।
শহীদ হওয়ার পর রাজেশের অমর দেহ আনা হয় গ্রামের বাড়িতে। তার অমর দেহ আসার সাথে সাথেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষেরা এসে পড়েছিলেন তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। প্রশাসনিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে কোনো রকম খামতি রাখা হয়নি। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে গান স্যালুট দেওয়ার পাশাপাশি গান স্যালুট দেওয়া হয় বীরভূম জেলা পুলিশের তরফ থেকেও। পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় শহীদ এই জাওয়ানের পরিবার এবং তার গ্রামের বাসিন্দাদের।
রাজেশ ওরাং-এর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রশাসনিকভাবে দেওয়া বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে, তবে বাকি রয়েছে রাজেশের শহীদ মূর্তি প্রতিস্থাপন। বাকি রয়েছে স্কুল অথবা স্কুলের নামকরণ। এছাড়াও প্রতিশ্রুতি মত গ্রামে একটি পানীয় জলের সাবমারসিবলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যদিও তা এক মাস পরেই খারাপ হয়ে যায় এবং তারপর আর ঠিক হয়নি। তবে তৈরি হয়েছে গ্রামের রাস্তা এবং পরিবারের একজন সদস্যকে যে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা করে দেখিয়েছে রাজ্য সরকার।
রাজেশ ওরাং-এর দাদা বিপুল ওরাং জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকারের তরফে যেসকল প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা অনেকাংশে করা হয়েছে এবং বাকি কাজ হবে বলেই বিশ্বাস।” পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, “গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য যে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেটি পুনরায় ঠিক করে দিলে গ্রামের মানুষেরা উপকৃত হবেন।”
অন্যদিকে রাজেশের বোন শকুন্তলা ওরাং জানিয়েছেন, “বাবা মাকে নিয়ে দাদা যে সকল স্বপ্ন দেখেছিলেন সে সকল স্বপ্ন আমি সবসময় পূরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। দাদাকে হারিয়ে মন খারাপ হলেও দেশের জন্য দাদা যা করেছেন তার জন্য আমরা গর্বিত।”
বিপুল ওরাং রাজেশের শহীদ হওয়া বছর পার করলেও এখনো বদলার দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য সেনা কর্মীদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছেন যাতে এইভাবে আর কাউকে যেন শহীদ হতে না হয়। তার কথায়, ‘আগামী দিন এইভাবে কাউকে শহীদ হতে না হয় তার জন্য আগাম প্রস্তুত থাকবেন। আর যোগ্য জবাব, সেটা তো নিশ্চয়ই। একদিন না একদিন তা তো দিতে হবে।’