১৩ বছরে রতন টাটা যা করে দেখিয়েছেন, ধারে কাছে নেই কেউ

SHARMISTHA CHATTERJEE

Published on:

Advertisements

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : রতন টাটার আমলে টাটা গোষ্ঠীর চূড়ান্ত সাফল্য পাওয়া ব্যবসার তালিকা খুব একটা ছোট নয়। বেশ দীর্ঘ। বর্তমানে অতিমারির আবহে টাটা গোষ্ঠীর অধীনে থাকা যে সংস্থাটি সর্বাধিক সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে তা হলো টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস।

Advertisements

করোনা পরিস্থিতিতে ওই গোষ্ঠীতে কর্মরত কর্মীদের সুবিধার্থে বহু নিয়ম শিথিল করা হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে তার মধ্যে রয়েছে, ভবিষ্যতে পাঁচ বছর যাবৎ ৭৫ শতাংশ কর্মীরা বাড়ি থেকেই বসে অফিসের কাজকর্ম করার সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে সারাদিনের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ সময়কাল অফিসের কাজে ব্যয় করলেই চলবে। বাকি সময়টুকু কর্মীকে অফিসের কাজে নিযুক্ত থাকতে হবে না।

Advertisements

বহুজনের মত ছিল অফিসে গিয়ে কাজ করার ফলে যাতায়াতের খরচ থেকে শুরু করে পরিশ্রম সবটাই খুব বেশি হয়ে যায়। যার ফলে কর্মীরা আলাদা করে সময় পেতেন না। সেই মতকেই গুরুত্ব দিয়ে টাটা গোষ্ঠীর এমন সিদ্ধান্ত। কর্মীদের মানসিক অবসাদের দিকের সাথে সাথে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এমন অভিনব চিন্তা কর্মীদের খুশি করেছে।আগামী দিনের ক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠীর এমন সিদ্ধান্তের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য গোষ্ঠীরাও তাদের কর্মীদের ক্ষেত্রে এর প্রচলন করতেই পারে।

Advertisements

টাটা গোষ্ঠীর চিরকালই সমাজে বাকিদের ভালো পথের দিশা দেখিয়ে এসেছেন। বাঁধা ধরা ছক থেকে বেরিয়ে নতুন কিছুর আবিষ্কার টাটা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই প্রথমবার নয়। তবে টাটা গোষ্ঠীর সব কৃতিত্বের মধ্যে বহুলাংশে যাঁর বেশি হাত তিনি আর কেউ নন টাটার বর্তমান ‘চেয়ারম্যান এমিরেটাস’ রতন টাটা। তিনি যা করে দেখিয়েছেন, তা আর কেউ পারবেন কিনা সন্দেহ আছে বলেই মনে করা হয়।

টাটা গোষ্ঠীর উদ্যোগেই প্রথম উড়ান সংস্থার যাত্রার সূচনা ঘটেছিল দেশে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় সেই সংস্থার চলে গিয়েছিল সরকারের দখলে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিদেশি লগ্নির পথ প্রশস্ত করে এবং তারপরেই টাটার উদ্যোগে টনি ফার্নান্দেজের এয়ার এশিয়ার সাথে যৌথ ভাবে এশিয়া ইন্ডিয়ার পরিষেবা চালু হয়েছিল দেশে। সম্প্রতি ঋণে ধুঁকতে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার দায়িত্ব ভার নিয়েছেন টাটা গোষ্ঠী। যার ফলে সে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পুনরায়।

রতন টাটার আমলে সাফল্যের তালিকা

১৯৯০ সালে তিনি প্রথম টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদে আসীন হন আর তারপর থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

১) ১৯৯৮ সালে তাঁর প্রথম আবিষ্কার প্রথম ভারতে তৈরি যাত্রীবাহী গাড়ি টাটা ইন্ডিকা। যা দু’বছরের মধ্যে এক নম্বর ব্যান্ডের তকমা লাভ করে দেশে।

২) টাটা টি’র সম্পূর্ণ স্বত্ব কিনে নেন তিনি। ২০০০ সালে যা বর্তমানে চায়ের আন্তর্জাতিক পানীয় ব্র্যান্ড।

৩) অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাল গ্রুপের সাথে যৌথ ভাবে মিলে গিয়ে নাম হয় টাটা এআইজি। বিমা ব্যাবসার ক্ষেত্রে পুনরায় ফিরে আসে টাটা।

৪) ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ভারতীয় সংস্থা বিএসএনএল-এর স্বত্ব ২০০২ সালে টাটার দখলে চলে আসে।

৫) ২০০৩ সালে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস-এর লক্ষমাত্রা ১০০ কোটি অতিক্রম করে যা এক অভাবনীয় সাফল্য।

৬) ২০০৪ সালে টাটা মোটরস-এর নাম অন্তর্ভুক্ত হয় শেয়ার বাজারে ঠিক তারপরেই দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা দেয়ু মোটরস টাটার দখলে আসে।

৭) ২০০৭ সালে ইউরোপের দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে থাকা ইস্পাত সংস্থার স্বত্ব আসে টাটার হাতে।

৮) দেশের নিম্ন মধ্যবিত্তদের গাড়ি কেনার শখ মেটাতে প্রথম সর্বনিম্ন মূল্য এক লাখ টাকায় যাত্রীবাহী টাটা ন্যানো আনে ২০০৮ সালে।

৯) ২০০৮ সালে জাগুয়ার ও ল্যান্ড রোভার নামের আন্তর্জাতিক দুটি ফোর্ড গাড়ির ব্যবসা টাটা গোষ্ঠী কিনে নেয়।

১০) যে স্টারবাক সংস্থার এখন রমরমা বাজার তার প্রবেশ ভারতে ঘটেছিল টাটা গোষ্ঠীর হাত ধরেই। ২০১২ সালে টাটা গোষ্ঠীর সাথে যৌথ উদ্যোগে টাটা স্টারবাকস লিমিটেড গড়ে তোলে যার প্রথম দোকান খোলা হয়েছিল মুম্বাইতে।

এত কিছু সাফল্যের মাঝেও এই মানুষটি ব্যক্তিজীবনে একাই কাটিয়ে দিলেন সারাটা জীবন। বিয়ে করেননি তিনি। বারংবার বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলতে গিয়ে জীবনে একবার প্রেম আসার প্রসঙ্গটিও উল্লেখ করেন।

যদিও সেই প্রেম আর বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। লস অ্যাঞ্জেলসে এক মেয়ের প্রেমে পড়লেও মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে ভারতে আসার অনুমতি না দেওয়ায় সেই প্রেমের কাহিনি ইতি ওখানেই ঘটেছিল। তারপর থেকে এই মানবদরদি মানুষটি একাই থেকে গেছেন নিজের কাজকে ভালোবেসে। কাজের সাথেই বোধহয় তিনি তাঁর আত্বীক সম্পর্ক তৈরি করে ফেলেছেন।

Advertisements