Jaguar Land Rover: অপমানের সঠিক প্রতিশোধ কোনদিনও অপমান হতে পারেনা একথা নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে গেছেন রতন টাটা। সাফল্যই হলো জীবনের সেরা প্রতিশোধ। তাঁর জীবনকে পর্যালোচনা করলে শেখার এমন বহু জিনিস আছে যা কল্পনা করা যায় না। তবে দুঃখের বিষয় হল আজ তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। দেশবাসীর মনে তাঁর মত একজন ব্যক্তি চিরকাল একটি বিশাল জায়গায় বিরাজ করবে। তাঁর কর্মজীবন অনুপ্রাণিত করে বহু মানুষকে।
রতন টাটা নিজের পড়াশোনা শেষ করেছিলেন বিদেশ থেকে এবং তারপর যখন টাটা গোষ্ঠীতে তিনি যোগদান করেন সেই সময় সংস্থার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। ১৯৯১ সালে যখন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে বসেন রতন টাটা, সেই সময় টাটা গোষ্ঠীর আয় ছিল ৫.৮ বিলিয়ন বা ৫৮০ কোটি ডলার, কয়েক বছর বাদেই তার নেতৃত্বে এই সংস্থার আয় প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার পার করে যায়।
টাটা গোষ্ঠীর একাধিক ব্যবসার মধ্যে টাটা মোটরস হল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। রতন টাটার স্বপ্নের প্রজেক্ট ছিল টাটা ইন্ডিকা। টাটা মোটরসের হাত ধরে ১৯৯৮ সালে এটি প্রথম লঞ্চ হয়। দেশের প্রথম ডিজেল ইঞ্জিনসহ হ্যাচব্যাক গাড়ি ছিল এটি। গাড়িটি ভারতীয় গাড়ির মার্কেটে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি এবং সংস্থার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯৯ সালে টাটা মোটরস সিদ্ধান্ত নেয় তাদের এই গাড়ির ব্যবসা বিক্রি করে দেবে ফোর্ড (Jaguar Land Rover) কোম্পানির কাছে।
আরো পড়ুন: বিশাল সাম্রাজ্যের থেকে বেতন হিসাবে কত নিতেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান
পরিকল্পনা অনুযায়ী রতন টাটা ফোর্ডের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ডের সঙ্গে কথা বলতে যান ডেট্রয়েট। তিন ঘন্টা দুজনের মধ্যে যে বৈঠক চলেছিল তাতে ব্যবসা কিংবা গাড়ি সংক্রান্ত কোনো আলাপ আলোচনা হয়নি। বরং পদে পদে অপদস্ত করা হয়েছিল রতন টাটাকে। বিল ফোর্ড রতন টাটাকে বলেছিলেন যে তিনি গাড়ি সম্পর্কে কিছু জানেন না, সেই কারণে এই ব্যবসা থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানোই ভালো। ফোর্ড টাটা মোটরস কিনে কার্যত দয়া করছে সংস্থার উপরে। এই অপমান শোনার পরেও চুপ করেছিলেন তিনি, কোন কথা না বলেই ফিরে আসেন ভারতে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিক্রি করবেন না তাদের গাড়ির ব্যবসা। টাটা মোটরসকে এমন সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেবেন যা দেখে সকলে অবাক হয়ে যাবে।
এরপরে অবশ্য পার হয়ে গেছে প্রায় নয় বছর, ততদিনে টাটা কনগ্লোমারেটে পরিণত হয়েছে। টাটা নমক থেকে শুরু করে টাটা স্টিল সবকিছুতেই টাটা গোষ্ঠীর জয়জয়কার। ভাগ্যের পরিহাসে সেই সময় ফোর্ডের (Jaguar Land Rover) দেউলিয়া হওয়ার জোগাড়। ফোর্ড কোম্পানিকে এই পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন রতন টাটা। ২০০৮ সালে ২.৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ফোর্ড কোম্পানির আইকনিক জ্যাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার কিনে নেন তিনি। যাকে একদিন অপমান করেছিলেন তাকে শেষ পর্যন্ত ধন্যবাদ জানাতে হয়েছিল বিল ফোর্ডের। ফোর্ডের ধারণা ছিল টাটার হাতেও হয়তো ব্যর্থ হবে জ্যাগুয়ার, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই তা টাটা মোটরসের সবথেকে বিক্রিত গাড়িতে পরিণত হয়। তাই অপমানের যোগ্য জবাব দেওয়া কাকে বলে তা শিখতে হবে রতন টাটার কাছ থেকেই।