নিজস্ব প্রতিবেদন : গোটা ভারতবর্ষে ৪০ কোটির বেশি গ্রাহক সংখ্যা তৈরী করে ভারতের টেলিকম বাজারে নজির সৃষ্টি করেছে মুকেশ আম্বানির সংস্থা Reliance Jio। মূলত সস্তায় উন্নত মানের পরিষেবার নিরিখে তারা এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহক বৃদ্ধি করার গণ্ডি পার করেছে। তবে বর্তমানে এই সকল গ্রাহকদের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন Jio থেকে। অজস্র পোর্ট আউটের (MNP) রিকুয়েস্ট এসেছে তা স্বয়ং জানা গেছে মুকেশ আম্বানির ট্রাইকে (Trai) দেওয়া চিঠি থেকে। কিন্তু কেন! টেলি বিশেষজ্ঞরা এর পিছনে বেশ কতকগুলি কারণ খুঁজে বের করেছেন।
মুকেশ আম্বানি ১০ ডিসেম্বর ট্রাইকে একটি চিঠি দেন। যেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তাদের প্রতিদ্বন্ধী এয়ারটেল (Airtel) এবং ভোডাফোন আইডিয়া (Vodafone Idea) লিমিটেড তাদের বিরুদ্ধে নানান ভুয়ো প্রচার করছে যার ফলে গ্রাহকরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মুকেশ আম্বানির সংস্থার অভিযোগ, এই দুই সংস্থা প্রচার করছে নতুন কৃষি আইনের ফলে লাভ হবে Reliance Jio র। তবে এই অভিযোগকে আগাগোড়া অস্বীকার করেছে ওই দুই সংস্থা।
পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষ্য করা গেছে জিও ছেড়ে দেওয়ার জন্য একটি ট্রেন্ডিং টপিক। যাও পরোক্ষভাবে জিওর ব্যবসায় ক্ষতি করছে বলে মনে করছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো শুধু কি এই সকল প্রচারই মুকেশ আম্বানির সংস্থার ব্যবসায়িক ক্ষতি ডেকে আনছে! কারণ এর আগেও এমন বহু সংস্থার বিরুদ্ধে বয়কটের ডাক উঠেছিল। আর সেসব ক্ষেত্রে ঐসকল সমস্যাটা কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন! সে সব হিসাব-নিকাশ ছেড়ে দিলেও জিও থেকে সাধারণ গ্রাহকদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আরো বেশ কিছু কারণ খুঁজে পাচ্ছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা।
Jio থেকে গ্রাহকদের মুখ ফেরানোর কারণ
১) ডেটা স্পিড : মুকেশ আম্বানির সংস্থা Reliance Jio বাজারে আসার সময় যে পরিমাণ ইন্টারনেট স্পিড বা ডেটা স্পিড দিয়ে থাকতো তার এখন অর্ধেকও নেই বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। যে কারণে তাদের বারংবার এই ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে সরব হতে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটি হলো সবথেকে বড় কারণ বলে মনে করছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা।
২) টকটাইম : বর্তমানে রিলায়েন্স জিওর যেসকল All-in-One প্ল্যানগুলি রয়েছে সেগুলির মধ্যে অন্য নেটওয়ার্কে কল করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টকটাইম (ফ্রি মিনিট) দেওয়া হয়। আর তা শেষ হলে পুনরায় টকটাইম ভরতে হয় গ্রাহকদের। সেই জায়গায় অন্য টেলিকম সংস্থাগুলি তাদের টকটাইম লিমিট তুলে দিয়েছে। সামান্য একটু খরচ বেশি হলেও অফুরন্ত কথা বলার স্বাধীনতা থাকছে। যে কারণে বহু গ্রাহককে সরব হতে দেখা যাচ্ছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি না রাখার বিষয়ে। এটি দ্বিতীয় কারণ বলে মনে করছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা।
৩) অসহযোগিতা : রিলায়েন্স জিও গ্রাহকদের কোন অভিযোগ জানানোর জন্য সবথেকে বড় সমস্যা হলো তাদের গ্রাহক সেবা প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করা। সংস্থার তরফ থেকে যে নম্বর দেওয়া রয়েছে সেই নম্বরে গ্রাহকসেবার প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে হিমশিম খেতে হয় গ্রাহকদের। এ বিষয়েও গ্রাহকদের বারংবার সরব হতে দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যাটিকেও অন্যতম সমস্যা বলে মনে করছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা।
৪) কানেক্টিভিটি : প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যেভাবে নেটওয়ার্ক পরিষেবা দেওয়ার কথা ছিল তা এখন অনেকটাই স্তব্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় জিও গ্রাহকরা নেটওয়াক সমস্যায় জর্জরিত। আর এই সমস্যার কারণেও বহু গ্রাহক জিও থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বলে মনে করছেন টেলি বিশেষজ্ঞরা।
তবে জিওর বিরুদ্ধে এমন একাধিক অভিযোগ থাকলেও এখনো দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ জিও পরিষেবার উপরেই বিশ্বাস করেন। এর মূলেও রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণে। যেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো এখনো অন্যান্য টেলিকম সংস্থার থেকে অনেকটাই সস্তা মুকেশ আম্বানির সংস্থা জিও।