অন্তরা নাগ: দুই রাজ্যকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে RBI-এর! ব্যক্তিগত লোন নিয়েই যত আশঙ্কা। সমস্যাটা হচ্ছে ছোট ঋণের ক্ষেত্রে। বিহার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যকে নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank Of India) সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে ওই দুটি রাজ্যে প্রচলিত বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকগুলির উদ্দেশ্যে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিহার এবং উত্তর প্রদেশে ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে স্বল্প ঋণের ব্যর্থতার পরিমাণ অনেক বেশি। দিন দিন এই পরিমাণ বেড়েই চলেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সমস্যার মুখে পড়তে পারে আর্থিক ভারসাম্য।
বড় ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্যারান্টার রাখা থাকে। যার ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধ করিয়ে নেওয়া যায়। যদি ঋণগ্রহীতা সঠিক সময়ে ঋণ না দেন, সে ক্ষেত্রে গ্যারান্টার হিসেবে যিনি থাকেন তাকেই পরিশোধ করতে হয় ঋণের অর্থ। কিন্তু ছোট ঋণের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা নেই। কোন গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অব্দি। কিন্তু এই সমস্ত ঋণ ফেরত পাবার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত লোকসানেরই মুখ দেখছে ব্যাংঙ্ক। স্বল্প পরিমাণ অর্থের ঋণ ব্যাংক থেকে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু সেগুলি সময় মতোপরিশোধ করা তো দূরের কথা, হচ্ছেই না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি। বিষয়টি বেশ চিন্তার বলে মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank Of India)।
সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক অথবা নন ব্যাংকিং সেক্টর, মাইক্রো ফাইন্যান্স অথরিটির পক্ষ থেকে স্বল্প মূল্যে ঋণ অফার করা হয় গ্রাহকদের জন্য। এই ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ ধার্য থাকে ১০০০০ থেকে ৫০০০০ টাকার মধ্যে। কোন কোন সংস্থা আবার ৫০০০০ টাকার বেশি আর্থিক ঋণ দিয়ে থাকে গ্যারান্টি ছাড়াই। সমস্যাটা হয় এই সমস্ত ঋণের ক্ষেত্রেই। গ্যারান্টি ছাড়াই যে সমস্ত ঋণ দেওয়া হয় সেগুলি পরিশোধ করার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। অল্প অল্প করে বাড়তে বাড়তে বিষয়টি এখন বড় আকার ধারণ করেছে। এই স্বল্পমূল্যের ঋণগুলি ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতিতে ধ্বস নামিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank Of India)।
আরও পড়ুন ? PNB Kyc: অন্তিম ডেট দিয়ে দিল পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, KYC না করালে বন্ধ হয়ে যাবে অ্যাকাউন্ট
২০১৯ সাল থেকে ভারতবর্ষে মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির রমরমা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ আর বিহার বিপদ সীমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। বিহারে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানির সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ থেকে ২৫ টি। ২০২৪ এ অর্থাৎ ৫ বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০টি। এই সমস্ত সংস্থাগুলি গ্যারান্টি ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্বল্পমূল্যের ঋণ হিসেবে দিয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা আরো অনেকটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (Reserve Bank Of India) তরফ থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে যে, লোন সংক্রান্ত এই সমস্যা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিকার করতে হবে। না হলে বড়সড়ো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে দেশবাসী। গত কয়েক মাস ধরে এই নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলির মধ্যে।
নন ব্যাংকিং সেক্টরগুলি থেকে ক্ষুদ্র ঋণের অফার দেওয়া হয়। তাও আবার গ্যারান্টি ছাড়াই। এর ফলে বেড়ে যায় আর্থিক সম্ভাবনা। একজন মানুষ একাধিক জায়গা থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে রেখে দিয়েছেন। কোন জায়গাতেই আর পরিশোধ করছেন না। ফলে একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। বিহারে কমপক্ষে ১০.১% মানুষ একসাথে তিনটি জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে রেখে দিয়েছেন। যা পরিশোধ করেননি। ৮.৭% মানুষ এমন রয়েছেন যারা চারটি বা তারও বেশি সংখ্যক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেও একই অবস্থা। সেখানেও ৭.৭% মানুষ তিনটি জায়গা থেকে একসাথে লোন নিয়েছে এবং ৬.৬ শতাংশ মানুষ চারটি অথবা তারও বেশি সংখ্যক সংস্থা থেকে লোন নিয়েছেন। কোনটাই পরিশোধ করেনি। তবে উত্তরপ্রদেশের চেয়ে বিহারের অবস্থা একটু বেশিই খারাপ। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank Of India) বারবার এই পরিস্থিতির সমাধান করার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে। নন ব্যাংকিং সেক্টরগুলির উদ্দেশ্যে।