নিজস্ব প্রতিবেদন : মাত্র ২৪ ঘন্টা, এই ২৪ ঘন্টাতেই বলিউডের দুই মহাতারকার পতনে সব যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। এমনিতেই লকডাউনের কারণে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল বলিউড, তারপর আবার পরপর দুদিন দুটি দুঃসংবাদ। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলিউডের খ্যাতনামা তারকা ইরফান খান, আর ঠিক তার ২৪ ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই চলে গেলেন আরও এক প্রবাদপ্রতিম মহাতারকা ঋষি কাপুর। ৬৭ বছর বয়সে তিনি সকলকে ছেড়ে পাড়ি দিলেন অন্য জগতে।
১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে। এরপর অভিনয়, ছবি পরিচালনা, নিজস্ব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে বলিউডে কাপুর পরিবারের নাম উজ্জ্বল করতে থাকেন। ২০১৮ সালে তাঁর শরীরে ধরা পড়ে মারণ রোগ ক্যান্সার। বিদেশে চিকিৎসা করানোর পর সুস্থ হয়ে ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসেন। তবে এরপর ২০২০ সাল শুরু হতেই ফেব্রুয়ারি মাসে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভর্তি হন হাসপাতালে। ফের আবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা। তবে এরপর গতকাল রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে তিনি আবার ভর্তি হন মুম্বাইয়ের এইচএন রিলায়েন্স হাসপাতালে। ধীরে ধীরে শারীরিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে আইসিউতে রাখা হয়। এর আগে দু-দুবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এবার আর ফেরা হলো না। বলিউড, আপনজন সকলকে ছেড়ে ৬৭ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি।
ঋষি কাপুরের জন্ম বলিউডের দ্য গ্রেট কাপুর পরিবারে। জন্মগতভাবে অভিনয় তার রক্তে লেখা ছিল। বাবা রাজ কাপুরের হাত ধরে অভিনয় জগতে পা রাখা। পারিবারিক পরম্পরায় বাবা রাজ কাপুর, পিতামহ পৃথ্বীরাজ কাপুর সকলেই ছিলেন বলিউডের সাথে যুক্ত। তবে ঋষী রাজ কাপুরের বলিউডে পা রাখাটা ছিল আলাদা এক আঙ্গিকে।
দ্য গ্রেট কাপুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও ঋষী রাজ কাপুরের অভিনয় জগত শুরু হয় কোন নায়ক হিসাবে নয়। তিনি প্রথম অভিনয় করেন বাবা রাজ কাপুরের ছবি ‘শ্রী ৪২০’ তে। কিন্তু এখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন সাইড রোলের ভূমিকায়। বলিউডের সেই বিখ্যাত গান ‘প্যায়ার হুয়া’ গানটিতে কয়েকটি বাচ্চার সাথে হেঁটে গিয়েছিলেন তিনি। এটাই ছিল ঋষি কাপুরের প্রথম অভিনয়।
এরপর তিনি শিশু অভিনেতা হিসাবে ১৯৭০ সালের বাবার হাত ধরে প্রথম অভিনয় করতে নামেন। ‘মেরা নাম জোকার’ ছবিতে অভিনয় করেন। তারপর বড় হয়ে নায়কের ভূমিকায় দেখা যায় ‘ববি’ সিনেমায়। যে ছবিতে ঋষি কাপুরের বিপরীতে দেখা যায় ডিম্পল কাপাডিয়াকে।
কিন্তু এই ছবিতে ঋষি রাজ কাপুরের অভিনয় করার কথা ছিল না। এই ছবিতে অভিনয় করার কথা ছিল সে সময়ের আরেক মহাতারকা রাজেশ খান্নার। কিন্তু রাজেশ খান্নাকে অভিনয় করানোর মতো টাকা ছিল না ঋষির বাবা রাজ কাপুরের হাতে। তাই রাজ কাপুর রাজেশ খান্নার জায়গায় নিজের ছেলে ঋষিকে অভিনয়ের জন্য নামিয়ে দেন সিনেমার মুখ্য ভূমিকায়। আর এই ছবি হয়ে যায় সুপারহিট। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ঋষি কাপুরকে। ববি (১৯৭৩) সিনেমার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে তিনি পান বেস্ট অ্যাক্টর আওয়ার্ড। তারপর একের পর এক ছবি লায়লা মজনু, রাফু চক্কর, সরগম, কর্জ, প্রেম রোগ, নাগিনা, হানিমুন, চান্দি, হেনা, বোল রাধা বোল, ইয়ে বাদা রাহা একের পর এক ছবিতে অভিনয়। আর এই সকল একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি আসতে থাকে একের পর এক আওয়ার্ড।
এরপর ১৯৮০ সালের ২২ শে জানুয়ারি তিনি বিয়ে করেন নিতু সিংকে। পরিবারে আসে ঋদ্ধিমা ও রণবীর কাপুর। তবে এদিন এই সমস্ত কিছুকে ছেড়ে চলে গেলেন মহাতারকা ঋষি কাপুর, পড়ে রইল শুধু তাঁর অজস্র স্মৃতি।