নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় রেল (Indian Railways) ভারতীয় নাগরিকদের কাছে গণপরিবহণের মেরুদন্ড। প্রতিদিন দেশের হাফ কোটির বেশি মানুষ ট্রেনের উপর ভর করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করে থাকেন। ভারতীয় রেলের তরফ থেকেও বিপুলসংখ্যক এই যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে নানান ধরনের সুরক্ষা প্রদান করা হয়। সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের তরফ থেকে কোচেরও বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
বর্তমানে ভারতীয় রেল মূলত দুই ধরনের কোচ ব্যবহার করে থাকে। এক ধরনের কোচ হলো আইসিএফ (ICF COACH) এবং অন্যটি হলো এলএইচবি (LHB COACH)। আইসিএফ কোচ তৈরি করা হয়ে থাকে চেন্নাইয়ের ফ্যাক্টরিতে। ১৯৫২ সাল থেকে এই ধরনের কোচ তৈরি করা হচ্ছে। এই জায়গায় এলএইচবি হলো জার্মানি একটি সংস্থার নামে, যার পুরো নাম লিংক হাফমেন বুশ। এগুলি তৈরি করা হয়ে থাকে কপুরথলাতে। ২০০০ সাল থেকে ভারতীয় রেলে এলএইচবি কোচের ব্যবহার শুরু হয়।
এখন প্রশ্ন হল কোন ধরনের কোচ সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত? ভারতে এখনো পর্যন্ত যত রেল দুর্ঘটনা হয়েছে তার মধ্যে দেখা গিয়েছে এলএইচবি কোচ যে সকল ট্রেনে ব্যবহার করা হয়েছে সেই সকল ট্রেন সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও এই ধরনের কোচের যাত্রীরা প্রাণে বেঁচে যেতে পারেন। সেই জায়গায় আইসিএফ কোচ সুরক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সুরক্ষার এই সকল দিক বিচার বিবেচনা করে ভারতীয় রেল আইসিএফ কোচের পরিবর্তে এলএইচবি কোচ ব্যবহার বৃদ্ধি করার দিকে জোর দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হল আইসিএফ কোচের তুলনায় এলএইচবি কোচ বেশি সুরক্ষিত কেন? আইসিএফ কোচ তৈরি করা হয়ে থাকে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। যে কারণে এই সকল কোচ অনেক বেশি ভারী হয়। অন্যদিকে এলএইচবি কোচ তৈরি করা হয় মাইল্ড স্টিল দিয়ে। যার ফলে এই কোচ তুলনামূলক অনেক হালকা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি আইসিএফ কোচের ক্ষেত্রে এয়ার ব্রেক ব্যবহার করা হয়। যে কারণে ব্রেক করা হলেও তা থামে অনেক দূরে। এলএইচবি কোচের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ডিস্ক ব্রেক। ফলে সহজেই থামতে পরে ট্রেন।
এলএইচবি কোচের সাসপেনশন অনেক ভালো। এলএচবি কোচে মাত্র ৬০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ থাকে যা কম্ফোর্টেবল হয় ও আওয়াজ কম করে। এছাড়াও রয়েছে ডবল সাসপেনশন। আইসিএফ কোচের সাসপেনশন থেকে ৭০ ডেসিবেলের। আইসিএফ কোচগুলির নিজস্ব বিদ্যুৎ তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে, সেই বিদ্যুৎ ব্যাটারিতে স্টোর করা হয়। কিন্তু এর ডায়নামো স্পিড ১২০ অর্থাৎ বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও স্পিড কমে যায়। কিন্তু এলএইচবি কোচগুলিতে ডায়নামো লাগানো নেই, এর ফলে এর গতি ২০০ পর্যন্ত উঠতে পারে। বিদ্যুতের জন্য এই কোচের শেষে জেনারেটর কার থাকে। এছাড়াও এলএইচবি কোচে থাকে সেন্ট্রাল কাপলিং, যে কারণে দুটি কোচ সহজে জোড়া লাগানো যায়।
এখন প্রশ্ন হল ট্রেনের কোন কোচগুলি আইসিএফ আর কোনগুলি এলএইচবি চিনবেন কিভাবে? সহজ ভাষায় বোঝালে বলা যায় ট্রেনে ব্যবহৃত নীল রঙের কোচগুলি হল আইসিএফ আর শতাব্দী, রাজধানী ইত্যাদি ট্রেনের ব্যবহৃত লাল রঙের কোচগুলি হলো এলএইচবি।