নিজস্ব প্রতিবেদন : ‘আধুনিক’ কথাটা মুখে উচ্চারণ করা যতটা সহজ, বাস্তবে হয়ে ওঠা ঠিক ততটাই কঠিন। একুশ শতকে এসেও কোনো মেয়েকে তার পেশা নিয়ে অবস্থান নিয়ে এই সমাজের মানুষ কথা শোনাতে ছাড়েন না।
আজও কোনো মহিলা অটোচালক হলে তাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ সহ্য করতে হয় আর সেই আধুনিক সমাজের একজন শিক্ষিতা নারী Zomato ডেলিভারি বয়ের কাজ করলে তাকেও যে কটুক্তি শুনতে হবে এ তো জানাই ছিল! কিন্তু সেই সকল কটুক্তিকে কুছ পরোয়া না করেই এগিয়ে গিয়েছেন বেলঘোরিয়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা সরকার।
থিয়েটার, মঞ্চ, শর্টফিল্মের পরিচিত মুখ সঙ্গীতা সরকারের বর্তমান বয়স ২২ বছর।রবীন্দ্রভারতীতে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি আর তার সাথে জোমাটো ডেলিভারি করেন। তার মত একজন শিক্ষিতা মেয়ে নিজের ক্যারিয়ারের বিষয়ে না ভেবে কেন Zomato-র ডেলিভারি করার কাজ বেছে নিলেন তা নিয়ে অনেকেই নানা রকম কথা শুনিয়েছেন, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল সঙ্গীতা।
তাই সমস্ত হাসি-ঠাট্টা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপকে উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছেন সঙ্গীতা, তিনি জানেন তার সিদ্ধান্ত সঠিক, তার বেছে নেওয়া রাস্তায় কোনো অন্যায় নেই। তাই দিনের শেষে একজন জোমাটো ডেলিভারির এক্সিকিউটিভ হিসেবে গর্বের হাসি হাসেন তিনি।
কিছুদিন আগেই তিনি একটি পোস্ট করেন যেখানে তিনি নিজের বর্তমান পেশার কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, “হ্যাঁ আমি Zomato delivery-র কাজ করছি আর সেই কাজে আমি গর্ববোধ করি। So called elite society-তে যাদের আমাকে নিয়ে সমস্যা যারা সর্বক্ষণ আমায় দেখলেই বলছেন ‘এত পড়াশোনা করে Zomato?’, ‘তোর তো কোনো আর্থিক সমস্যা নেই তবে কেন?’, ‘ওই হবে নাটক আর Zomato’। তাদেরকে বলছি, থিয়েটার করি তো তাই থিয়েটার থেকে যে নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি। সেটাই বলছি আমার কাছে লোক না ঠকিয়ে যে পেশায় অর্থ উপার্জন করা যায় সেটাই সম্মানের। আর হ্যাঁ আমরা খাবার ডেলিভারি করি আন্ডার টেবিল টাকা নয়।” এরপর তিনি ডেলিভারি গার্লের পোশাকে নিজের ছবি আপলোড করে হ্যাসট্যাগ দিয়ে লিখেন প্রাউড টু বি Zomato গার্ল।
কেন এই পথে এলেন তিনি?
এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সঙ্গীতা বলেন, “আমার পেশা হচ্ছে থিয়েটার। থিয়েটারটাকে বজায় রাখার জন্যই যে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন সেই আর্থিক সহায়তা আমি Zomato-র কাজ করে আমি পাচ্ছি।” লকডাউনে সব জায়গায় নাটক বন্ধ, নাট্যকর্মীদের সহায়তা করার জন্য এই কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি।
সঙ্গীতা মনে করেন কোন কাজই ছোট নয়, সব কাজই সম্মানের, আর তাকে দেখার পরে কিছু মানুষ যদি Zomato ডেলিভারির কাজ বেছে নেন তাহলে তিনি মনে করবেন তার সকল প্রয়াস সার্থক। তার কথায়, “যে যেটাকে কাজ হিসেবে গ্রহণ করে সেটাই তার ক্যারিয়ার। তাই প্রত্যেকটা কাজকেই সম্মান করা দরকার।”
আর নিজের এই জীবন ভঙ্গির মধ্য দিয়ে সমাজকে একটা বড় বার্তা দিলেন তিনি, প্রমাণ করে দিলেন আধুনিকতা আসলে জীবনবোধ ও মানসিকতার প্রতিফলনের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায়।