করোনা মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক সংস্থা, নাচ গান ভুলে ছুটছে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে

নিজস্ব প্রতিবেদন : ওরা কেউ নৃত্য শিল্পী, কেউ সঙ্গীত শিল্পী। সারা বছর শহরে সৃজন কর্মে মেতে থাকে ওরা। কিন্ত আজ ওদের হাতে চাল কৌটো, আলুর প্যাকেট, তেল, সাবান, নুন। করোনা পরিস্থিতির মাঝে নিরন্ন আদিবাসী মানুষগুলির জন্য আজ ওরা পথে নেমেছে, নেমেছে করোনা মোকাবিলায়। শিল্পীদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করেছে অর্থ। তা দিয়ে খাদ্যসামগ্রী কিনে বিলি করলো নদী পেরিয়ে দুর্গম আদিবাসী গ্রামে।

বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ি থেকে ৪১ কিমি দুরে ঝাড়খন্ড সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রাম কুরাল মাটি পৌঁছে যায় শিল্পীদের দলটি। রাজনগর থানার জয়পুর পঞ্চায়েতের অধীন কুড়াল মাটি গ্রাম। সিদ্ধেশ্বরী ও নুনবিল দুটি নদীর মাঝে প্রত্যন্ত এই গ্রাম। যোগাযোগ নেই বললেই চলে। নদী পেরিয়ে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে সেই গ্রামে পৌঁছতেই আদিবাসী মানুষগুলির গাল ভরা হাসি। ওরা বললেন, ‘বাবু এতদিন কেউ আসে নাই। তুরাই এলি।’

সারা দেশ জুড়ে যখন একাধিক জায়গায় লকডাউন ভাঙার চেষ্টা, তখন সোশ্যাল ডিসটেনস মেনে সুশৃঙ্খলভাবে খাদ্য সামগ্রী আঁচল কিংবা গামছা পেতে নিলো ওরা। শিল্পী দল চুন নিয়ে গিয়ে কেটে দিল দাগ। সেই দাগের বাইরে গেল না একজনও।

সঙ্গীত শিল্পী সঙ্ঘমিত্রা কবিরাজ বলেন, “আমরা এই লকডাউনে মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানতে পারছি না। অথচ আদিবাসী সমাজের ভাইবোনরা কত সুশৃঙ্খল। দেখে আমরা অবিভূত।”

সাংস্কৃতিক সংস্থা সংস্কার ভারতী সিউড়ি শাখার উদ্যোগে রবিবার কুরাল মাটি গ্রামে ১৪৪ জন পরিবারের ৯৪৪ জন বাসিন্দাদের জন্য শিল্পীরা নিয়ে যান ৫ কুইন্টাল চাল, ১০ বস্তা আলু, নুন, তেল, সাবান। গ্রামের বাসিন্দা দেবীশ্বর মারাণ্ডি, খুদিরাম মহুলী, চুরকা হেমরমরা বলেন, “দেশে করোনা এসেছে তাই গ্রামে কেউ বেরোচ্ছে না। আমরা দীনমজুরী করে খাই। কাজ নেই। ঘরে চালের টান পরেছে। এই সময় এই সাহায্য পেয়ে আমাদের উপকার হল।”

সংস্কার ভারতীর সিউড়ি শাখার প্রতিনিধি সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, স্বাধীন ধর, স্বরুপ সরকাররা বলেন, লক ডাউনের মাঝে আমাদের এই উদ্যোগ আগামী দিনেও জারি থাকবে। এই কাজে আমাদের সদস্যদের পাশাপাশি বহু শুভানুধ্যাযীরা এগিয়ে এসেছেন। উত্তর কলকাতা শাখা সাহায্য পাঠিয়ে।”