Saraswati Puja: দেবী সরস্বতী হলেন বিদ্যার দেবী। তিনি শ্বেতপদ্মের আসনে অধিষ্ঠিতা এবং শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা। সাধারণত সকলেই জানি যে দেবী সরস্বতীর বাহন হল শ্বেতশুভ্র রাজহংস। একহাতে বীণা এবং অপর হাতে বেদ ধারণ করেন। দেবীকে স্মরণ করেই মুর্খ কালিদাস হয়েছিলেন পণ্ডিত। কিন্তু কখনো কারোর চোখে পড়েনি এই বিদ্যা এবং জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর বাহন জোড়া বাঘ। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনাটি কিন্তু একেবারে সত্যি। থিমের চক্করে শ্বেতবসন ছেড়ে দেবীকে পরছেন বাহারি রঙের কাপড়। বীণার বদলে গিটার, হাঁসের আদলে স্কুটি, সবই হচ্ছে হাল ফিলের শহুরে পুজোয়। তবে আজকে যে পুজোর কথা তুলে ধরা হবে তা কিন্তু কোন শহরের পুজো নয় বরং গ্রামের পুজো।
এই পুজোতে (Saraswati Puja) প্রতিমার সাজ হল সাবেকী, ডাকের সাজ সবই ধরা পড়ে এই মূর্তিতে। পুজোর বয়স কিন্তু বেশ পুরনো। কিন্তু বেমানান হলো দেবী মূর্তির সামনে একজোড়া বাঘ। আকারে ছোট, তবে ডোরাকাটা কালো-হলুদ রয়্যাল বেঙ্গলই বটে। এই দেবীর সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় সুন্দরবনের বনবিবির থানে যে বাহন দেখা যায় তার। তবে কি এটি সুন্দরবনের কোনও অখ্যাত গ্রামের পুজো? স্থানীয় দেবীর সঙ্গে মিল রেখেই সরস্বতীর ওমন বাহন। তবে এটি সুন্দরবনের নয়।
এই গ্রামটি অবস্থিত বীরভূমের দুবরাজপুরে। সেখানকার খোসনগর গ্রাম সরস্বতী পুজোর জন্য বিখ্যাত। সংখ্যায় অনেক পুজো না হলেও একটি পুজোই এখানে অনেক জাঁকজমক করে হয়। জমিদার বাড়ির পুজো, যেখানে বিশেষ ধাঁচের সরস্বতী মূর্তি দেখা যায়। মূর্তির গড়ন অনেকটা দেবী দুর্গার মতো। একচালের মধ্যমণি সরস্বতী, দুই পাশে দেবী লক্ষ্মী ও রাজলক্ষ্মী। তিনজনের হাতেই বীণা এবং চারপাশে সখীদের মূর্তি রয়েছে, তবে আকারে ছোট। যেটা সত্যি মানুষকে অবাক করে দেয় সেটি হল দেবীর সামনে থাকা দুটি বাঘের মূর্তি। কোনদিনও সরস্বতী মূর্তিতে (Saraswati Puja) এমন বাহন দেখা যায় না। তবে দুবরাজপুরের এই পুজোয় এটাই বিশেষত্ব।
জমিদার বাড়ির এই বিশেষ পুজো নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উৎসাহ এবং আনন্দ দুটোই রয়েছে। গ্রামের মাত্র দুটি উৎসবই জনপ্রিয়। একটি মুসলিমদের উরস পরব, অন্যটি সরস্বতী পুজো। প্রথমটি মুসলিমদের উৎসব, কাজেই সেখানে হিন্দুদের আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) নিয়ে মাতামাতি করবেন না এলাকার মুসলিমরা এমনটাও ভেবে নেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু এই গ্রামের ক্ষেত্রে চিত্রটি একেবারে আলাদা। দুই উৎসবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাদের কাছে দুটো উৎসবেরই গুরুত্ব সমান। মুসলিমরা যেমন সরস্বতী পুজোয় অংশ নেন, হিন্দুরাও তেমনই উরস পরবে। স্থানীয় এক মাজারে বসে উরসের আসর। সেখানে দলে দলে ভিড় জমান সবাই।
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর পরেরদিন খেতে হয় ‘গোটা সেদ্ধ’, জানেন কেন?
দুবরাজপুরের এই গ্রামে এই পুজোকে বিশেষ বলতে হয়, কারণ এখানে সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) বিসর্জনের আগে মাজারে সিন্নি চড়ানো হয়। গ্রামবাসী বিশ্বাস করে যে, এমনটা না করলে দেবীমূর্তির বিসর্জন করা যাবে না। কেন এই নিয়ম পালন করা হয় তা জানা না গেলেও, দীর্ঘদিন ধরে তা পালিত হয়ে আসছে। সকলেই ভক্তিভরে এই নিয়ম মেনে চলেন। কখনো কেউ এই নিয়ম মানতে আপত্তি করেনি। এককালে এখানে বিশাল মন্দির থাকলেও, বর্তমানে তা ভগ্নপ্রায়। মাজারের অবস্থাও তেমন ভালো নয়।
কিন্তু যখনই পুজো বা পরবের সময় আসে সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো হয়। বাংলায় এই ধরনের পুজো এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে। তবে থিমের পুজোর চাকচিক্যে কোথাও যেন হারিয়ে যেতে বসেছে এই ধরনের পুজো। সাবেকী প্রতিমায় ভক্তিভরে পুজোর আয়োজন করেন সকলে। এখানকার আয়োজনে আপনি খুঁজে পাবেন না কোনো খুঁত বা খামতি। বিদ্যার দেবীই তাঁদের কাছে প্রধান। তাই একইসঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতীর আরাধনায় মাতেন গ্রামবাসী।