নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘকাল ধরেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত বিষয়টি সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি অসন্তোষ তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য কেন্দ্র সরকার জানুয়ারি মাসের প্রথম তারিখেই ৪% ডিএ ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রের কর্মচারীদের এই ডিএ বৃদ্ধি হলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ ২১ শতাংশে পৌঁছে যাবে।
কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের সাথে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র এই পার্থক্যের জন্যই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটি অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনগুলি সমান মহার্ঘ্য ভাতা চাইছিলেন।
কেন্দ্রীয় হারে সমান মহার্ঘ ভাতার দাবি তুলে কংগ্রেস সমর্থিত কনফেডারেশন অফ স্টেট গভারমেন্ট এমপ্লয়িজ ও আরও দুটি সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন মামলা দায়ের করে স্যাটে। এই মামলার রায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেরিয়েছিল। এই সময়ে জানানো হয় যে ডিএ দেওয়া বা না দেওয়ার রাজ্যের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এরপর এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই ওই বছরের ৩০ শে মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন। এই মামলার রায় বেরোয় ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট।
এই রায়ে জানানো হয় যে, “ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার।” এছাড়াও ডিএ কীভাবে ও কী হারে দেওয়া হবে তা বিচার করে স্যাটকে তিন মাসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ ও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্য সরকার এই রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। ২০১৯ সালের ৭ই মার্চ সেই পিটিশন খারিজ হয়ে যায়।
স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল তথা স্যাট ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগেই ২০০৬ সাল থেকে বকেয়া যাবতীয় পাওনা সরকারি কর্মীদের মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০১৯ সালের ২৬শে জুলাই স্যাট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডি.এ দিতে হবে। কিন্তু তারপরও রাজ্য সরকার ডিএ মেটানোর পথে হাঁটেন নি। এরপর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
সরকার এই নির্দেশ না মানায় সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা করেছিলো। ডিএ সংক্রান্ত এই মামলাটি পুনরায় বিবেচনা করার জন্য রাজ্যের তরফ থেকেও পিটিশন দায়ের করা হয়। গত জুলাই মাসের ৮ তারিখে রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়ে স্যাট জানায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতেই হবে।
এরপর করোনা পরিস্থিতির কথা বলে ডিএ দেওয়ার সমস্যার কথা জানায় রাজ্য সরকার। স্যাট-এর উত্তরে জানায়, এনিয়ে ভাবনা চিন্তা করে দেখা হবে। এরপর আবারও স্যাটের কাছে হারতে হলো রাজ্য সরকারকে। সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া ডি.এ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলো স্যাট।
বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত খবরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন অত্যন্ত খুশি। এপ্রসঙ্গে রাজ্য সংগঠনের অ্যাডভোকেট সর্দার আমজাদ আলী জানান, “রাজ্য বারবার হারার পরেও ডিএ মিলছিল না। এরপর আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। সেখানে ১৬ ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত তারিখ বলে ঘোষণা করেছে স্যাট। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সমান হারে ডিএ দিতে হবে। চিফ সেক্রেটারিকে এই নির্দেশ পালন করার রায় দিয়েছে স্যাট।”