নিজস্ব প্রতিবেদন : বর্ষাকালে বা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির সময় সাপের উপদ্রব বাড়ে। তবে বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাতে আর কালের নয়, যেকোনো মরসুমেই জনবসতি এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে এসে পড়ছে সাপেরা। আমাদের রাজ্য বা জেলায় যে সকল বিষধর সাপের দেখা মেলে তাদের মধ্যে রহস্যময় এবং তীব্র বিষধর সাপ হলো কালাচ।
কিন্তু এই সাপকে কেন রহস্যময় বলা হয়?
সর্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি রহস্যময় সাপ৷ কারণ এই সাপের কামড়ের দাগ দেখা যায় না, এছাড়াও কামড়ের জায়গায় কোনও জ্বালা যন্ত্রণা অথবা রক্তপাত হয় না৷ এমন কি কোনও ঘুমন্ত মানুষকে যদি ঘুমের মধ্যেই এই সাপ কামড়ায়, তাহলে সেই মানুষের ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু ঘটতে৷ আবার কামড়ের কয়েক ঘন্টা পরও কামড়ের বেশ কিছু লক্ষন রোগীর শরীরে দেখা দিতে পারে। খুব সামান্য পরিমাণ বিষ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যু ঘটাতে যথেষ্ট বলে প্রমানিত৷ আরও ভয়ানক বিষয় হলো, এই কালাচ সাপকে সচরাচর খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। কারণ তারা গভীর রাতে বের হয় এবং সূর্যের আলো ওঠার আগেই লুকিয়ে পড়ে।
এই সাপের কামড়ের লক্ষণের ক্ষেত্রেও নানান প্রকারভেদ হয়েছে। কারণ ক্ষেত্রে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়, কারোর চোখে ঢলে পড়ে, কারোর ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, কারোর শরীরে দেখা যায় গাঁটে ব্যথার মত নানান রকমের লক্ষণ।
এমনকি এবছর আগস্ট মাসের ২২ তারিখে বীরভূমের নলহাটি থানার অন্তর্গত গোঁসাইপুর গ্রামের দেব মাল নামে ১০ বছরের এক ছাত্রের মৃত্যু ঘিরেও দানা বাঁধে রহস্য। কারণ পরিবারের লোকজনের দাবি ছিল, তাদের ছেলেকে সাপে কামড়ায় নি অথচ ডাক্তাররা সাপে কামড়ানোর ইনজেকশন দিয়েছে। ডাক্তারদের অভিমত ছিল, ওই ছাত্রকে কালাচে কামড়েছে। সর্প বিশেষজ্ঞদের অনেকেই ওই ছাত্রের শরীরে দেখা দেওয়া লক্ষণের কথা শুনে জানিয়েছিলেন ছাত্রটিকে কালাচেই কামড়ে ছিল। এই সাপ এবং এই সাপের কামড় এমনই রহস্যময়।
ছিপছিপে, কালো রঙের উপর সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগের ফণাহীন এই সাপটি মানুষের সাহচর্য পছন্দ করে৷ সাধারণত কালাচকে মাটির বাড়ির আনাচে কানাচে, ঝোঁপঝাড়ে দেখতে পাওয়া যায়৷ বর্ষাকালে ও গরমকালে এই সাপ খাদ্যের সন্ধানে ঘরের মধ্যে বিছানার ওপর বালিশের নীচেও চলে আসে। এছাড়াও মাদুর, চাটাই বা গোটানো বিছানার মধ্যে গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে থাকে৷
কিভাবে এড়াবেন এই সাপ
এই সাপ এড়ানোর জন্য আলাদা কোনো রকম পন্থা নেই। অন্যান্য সাপ এড়ানোর জন্য আমরা যে সকল পন্থা ব্যবহার করে থাকি সেগুলিকে অবলম্বন করতে হবে। যেমন –
১. বাড়ির আনাচে কানাচে ঝোঁপঝাড় সব সময় পরিষ্কার রাখুন৷
২. কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে রাখতে পারেন সাপের ঘরে ঢুকতে বাধা দিতে।
৩. কোথাও যেন নোংরা আবর্জনা না জমে থাকে খেয়াল রাখবেন।
৪. রাতে মশারী টাঙিয়ে ঘুমান। আর অবশ্যই মশারি বিছানায় গুঁজে দিন।