লাল্টু মুখার্জী: গত বুধবার বীরভূমের দুবরাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অরিত্র মন্ডল নামে ৩ বছর ৮ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয় দুদিনের জ্বরে। যে ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আতঙ্ক মূলত ডেঙ্গু নিয়ে। কেননা ওই শিশুর মৃত্যুর পাশাপাশি ওই পরিবারের আরও দুজন জ্বরে আক্রান্ত, পাশাপাশি এলাকার ও বেশ কয়েকজন জ্বরে আক্রান্ত। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক ছড়ালেও বীরভূমে এখন মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus Panic In Birbhum)।
স্ক্রাব টাইফাস নিয়ে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে রয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। দুবরাজপুর পৌরসভার যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার মা চৈতালি মন্ডলের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত। এছাড়াও ওই এলাকায় কার্তিক বাদ্যকর নামেও এক ব্যক্তি স্ক্রাব টাইফাস পজেটিভ হয়েছেন। শুধু তাই নয় এলাকায় ডেঙ্গু ছড়ানো মশা অর্থাৎ এডিস মশার লার্ভা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এমনকি ওই এলাকায় ডেঙ্গু মশার ডেনসিটি অনেক বেশি বলেও জানা যাচ্ছে।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আরি জানিয়েছেন, চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০। যদিও তিনি চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন। কেননা চিকিৎসার জন্য সমস্ত রকম ওষুধ রয়েছে হাসপাতালে এবং ডেঙ্গু অথবা স্ক্রাব টাইফাসে যারা যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বা উঠছেন।
স্ক্রাব টাইফাস হল ওরিয়েন্সিয়া শুশুগামুশি নামে এক ধরনের অন্তঃকোষীয় পরজীবীর সংক্রমণ। সাধারণত জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরজীবী পোকার লার্ভার কামড়ের ৬ থেকে ২০ দিন পরে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। স্ক্রাব টাইফাসে কেউ আক্রান্ত হলে পোকার লার্ভা কামড়ের জায়গায় প্রথমে র্যাশ, পোড়া ঘায়ের মত লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এর পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত হলে উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, র্যাশ, বমি, অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।
দুবরাজপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই শিশুর মৃত্যুর পর শুক্রবার সকালবেলা থেকেই দুবরাজপুর পৌরসভার তরফ থেকে ওই এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ চালানো হয়। এলাকা জুড়ে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজ করা হয়। অন্যদিকে ওই ওয়ার্ডের পরিস্থিতি দেখে এদিন রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুবরাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পীযুষ পান্ডে।