বাংলার ৭ জেলার অবস্থা গুরুতর, কেন্দ্রের কড়া পদক্ষেপ, আসছে প্রতিনিধি দল

Madhab Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশের পাশাপাশি লকডাউন চলছে পশ্চিমবঙ্গেও। কিন্তু এই রাজ্যের কিছু কিছু জেলার মানুষ এখনো ভীষণভাবে অসচেতন!তারা লকডাউনকে বিশেষভাবে পাত্তা দিচ্ছেন না। মানছে না সামাজিক দূরত্ব। ভিড় করে বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। মাংসের বাজারে ভিড় চোখে পড়ার মতো! মনে হচ্ছে কোন বড় উৎসব লেগেছে! কিছু জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বচসাও তৈরি হচ্ছে।

Advertisements

Advertisements

পুলিশ প্রশাসনের সতর্কবার্তা না মেনে সাধারণ মানুষ বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়, মুখে মাস্কটুকুও নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন না। আবার কিছু কিছু জায়গায় মাস্ক পড়ে মানুষ এমনভাবে ভিড় ঠেলে ঠেলে করে রাস্তার মধ্যে যাচ্ছেন যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। মাস্কটাকেই যেন তারা জাতীয় রক্ষাকবচ হিসেবে ভেবে নিয়েছেন।পুলিশ-প্রশাসন রাজ্য সরকার-কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে এত বলা সত্ত্বেও কিছু মানুষ এখনও ভীষণ ভাবে অসেচতন। এই অসেচতন মানুষগুলির জন্যই ভুগতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

Advertisements

ইতিমধ্যেই কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গাকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি এলাকাকে সম্পূর্ণভাবে সিল করে দেওয়া হয়েছে তবুও মানুষের হুঁশ ফিরছে না!

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গকে আগেই এ ব্যাপারে সাবধান করেছিল, পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছে না। ফলত এই রাজ্যকে ভুগতে হতে পারে! আর এবার সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কথা অনুযায়ী কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং আর কালিম্পং জেলায় পরিস্থিতি ভীষণভাবে গুরুতর! সংক্রমণের নিরিখে স্পর্শকাতর জেলাগুলিকে চিহ্নিত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এইবার বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী ৩৫(১), ৩৫(২), ৩৫(২)(এ), ৩৫(২)(ই) এবং ৩৫(২)(আই) ধারা অনুসারে কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগ করবে তারা। কেন্দ্রের অধিকার প্রয়োগ করে তারা একটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল পাঠাবে রাজ্যে। এই দল যাবতীয় জিনিস খতিয়ে দেখবে। এবিষয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দেওয়াও হয়ে গেছে।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে।

গত রবিবার নবান্নকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে যে দুটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে তারা। এই দুটি দল সাত জেলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। অনধিক তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রের এই প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গে এসে পৌঁছাবে।

এই দুটি প্রতিনিধি দলে কারা কারা থাকবেন?

দুটি আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথম দলটি কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর চব্বিশ পরগনায় এই দলটি যাবে। এই প্রথম দলটির নেতৃত্বে থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব রমেশ চন্দ্র গন্ট, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জিলে সিংহ ভিকাল, পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক আর পতি এবং উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের ডিরেক্টর সীতারাম মিনা ও এই দলে থাকবেন।

দ্বিতীয় টিমটি যাবে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ে। এই দলটির নেতৃত্বে থাকবেন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিনীত জোশী। এই দলে থাকবেন পাবলিক হেল্থ স্পেশালিস্ট অধ্যাপক শিবানী দত্ত, বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার উপদেষ্টা অজয় গাঙওয়ার, উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের ডিরেক্টর ধর্মেশ মাকওয়ানা। এ ছাড়াও এই দলে থাকবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি সেক্রেটারি এন.বি. মানি।

এই প্রতিনিধি দল কী কী খতিয়ে দেখবে?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে যে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী লকডাউনের শর্ত এই সব জায়গাগুলিতে লকডাউন ঠিকঠাক মেনে চলা হচ্ছে কিনা এটি খতিয়ে দেখবেন ঐ দল। এছাড়াও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন কি না, রাস্তায় সোশাল ডিস্টেন্সিং ঠিক মতো মানা হচ্ছে কিনা, লোকজন কীরকম হারে রাস্তায় যাতায়াত করছেন এই বিষয়গুলি দেখবেন তারা খতিয়ে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, হাসপাতালের পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলি সরেজমিনে দেখবেন এই দল।

বিরোধী দলগুলির বক্তব্য সরকার সংক্রামিত ও মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম ভাবে গোপন করছে! যার ফলে সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে হেলাফেলা করছে এবং লকডাউনকে উপেক্ষা করছেন! এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন এই প্রতিনিধি দল। রাজ্যের হটস্পট জেলাগুলিও তারা পর্যবেক্ষণ করবেন। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকাতে কীরকম অনুপাতে করোনা টেস্ট হচ্ছে তাও তারা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে স্পর্শকাতর সাত জেলাতে পর্যাপ্ত টেস্ট কিট রয়েছে কিনা, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঠিকমতো পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি) ঠিকমত পাচ্ছেন কিনা এগুলিও সেই দল পর্যবেক্ষণ করবে। এ ছাড়া ত্রাণ শিবিরগুলিতে শ্রমিকদের পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখবেন এই প্রতিনিধি দল।

Advertisements