সাধারণ কর্মী থেকে এই গুণে রত্ন, শান্তনু এখন রতন টাটার বন্ধু ও সহযোগী

SHARMISTHA CHATTERJEE

Updated on:

Advertisements

শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : রতন টাটার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরামর্শ দাতা থেকে শুরু করে সব সময়ের ছায়াসঙ্গী শান্তনু নায়ডু। কিন্তু একসময় তিনি এই টাটা গোষ্ঠীরই একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। তবে কিছু ঘটনা থেকে সম্পর্কের সমীকরণটা বর্তমান জায়গায় এসে পৌঁছেছে। যেখানে সমস্ত কিছুতে রতন টাটা শান্তনুর পরামর্শ ছাড়া চলেন না। সেই অজানা গল্পের কথাই জেনে নেওয়া যাক।

Advertisements

বয়সটা খুব একটা বেশি নয়, মাত্র ২৮ বছর। সেই বয়সেই শান্তনু নাইডু বিগত কয়েক বছর ধরে রতন টাটার চোখের মণি হয়ে উঠেছেন। বয়সের ক্ষেত্রে দুজনের বৃহৎ ফারাক কিন্তু তাঁদের মধ্যে বয়স কিছু বন্ধুত্বে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি।

Advertisements

শান্তনুর পড়াশোনা সম্পর্কে যা জানা যায়, তিনি অ্যামেরিকায় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাশ করার পর টাটা গোষ্ঠীরই একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছিল। শান্তনুর পূর্বপুরুষরা যেহেতু টাটা গোষ্ঠীতে কাজ করতেন সেই সূত্রেই শান্তনুর ওই গোষ্ঠীতে যোগদান। টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের সাথে তার সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার পেছনে যা কাজ করেছিল তা হলো শান্তনুর রাস্তার কুকুরদের প্রতি ভালোবাসা। তাই তাদের দুজনকে এতটা কাছে নিয়ে এসেছিল।

Advertisements

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুবার চোখে পড়েই থাকে রতন টাটার রাস্তার কুকুরদের নিয়ে করা মানবিক পোস্টগুলি। তাঁর সংস্থাতেও এমন একজন তরুণ যুবক রয়েছেন যিনি কিনা এই রাস্তার কুকুরদের প্রতি তাঁর মতোই সমমনোভাবসম্পন্ন তা দেখেই তিনি শান্তনুকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন।

শান্তনুর টাটা গোষ্ঠীতে শুরুটা হয়েছিল টাটা এলক্সির একজন কর্মী হিসেবে। তাঁর মধ্যে রাস্তার কুকুরদের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল একটি ঘটনার পর থেকে। একবার তাঁর গাড়িতে একটি রাস্তার কুকুরের ধাক্কা লাগার পর থেকেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এদের জন্য কিছু করার।যেমন ভাবনা তেমন কাজ তারপরেই সেই টাটা গোষ্ঠীর এমিরেটাস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে কুকুরদের গলায় এক ধরনের কলার গলায় পরানোর জন্য যার ফলে গাড়ির আলো পড়লেই তা আলোয় বিচ্ছুরিত হয় এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে কুকুররা যাতে রক্ষা পায়।

পশুদের জন্য এই বিশেষ প্রকার কলার তৈরি করতে অর্থ সংগ্রহের কারণে নিজের ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ওয়েবমিনারের আয়োজন করতে থাকে যেখানে কিভাবে অল্প বয়সে শিল্পপতি হওয়া যায় তাই নিয়ে আলোচনা হতো। সেই ওয়েবমিনারে যারা যোগদান করতেন তাদের প্রত্যেকের থেকে ৫০০ করে টাকা নিয়ে তিনি পশুদের এই বিশেষ কলার তৈরির কাজে লাগাতেন। এমনকি তিনি নিজের একটি সংস্থাও খুলেছিলেন এই উদ্যেশ্যে যার নাম ‘মোটোপস’। এর কথা পরবর্তীতে টাটা গোষ্ঠীর নিউজ লেটারে প্রকাশিত হয়েছিল।

শান্তনুর এতসব কর্মকাণ্ড যখন চলছিল তখন কিন্তু রতন টাটার সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়নি। এরপরেই তাঁর বাবার পরামর্শে তিনি রতন টাটাকে একটি চিঠি লেখেন যে চিঠিতে পথ পশুদের নিয়ে তাঁর নিজের ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। সেই চিঠি পাওয়ার পরেই টাটার থেকে তাঁর ডাক আসে এবং বৈঠকে বসেন। আর এখন তো আমরা সবার রতন টাটার সাথে শান্তনুর সম্পর্ক দেখতেই পাই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো ট্রেন্ড থেকে শুরু করে ইমোজি সমস্ত কিছু শান্তনুর হাত ধরেই রতন টাটার শেখা। মাঝে শান্তনু পড়াশোনার কারণে আমেরিকা চলে গেলেও পরবর্তীতে সে ফেরার পরেই তাঁকে নিজের সহকর্মী বানিয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ভাবে শান্তনুর সাথে তাঁর অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক।

ব্যবসায়িক যেকোনো ক্ষেত্রে পরামর্শ দাতার মত কাজ করে শান্তনু। রতন টাটার সাথে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে সে একটি বইও লিখে ফেলেছে যার নাম, ‘আই কেম আপন এ লাইটহাউজ।’

Advertisements