নিজস্ব প্রতিবেদন : তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগ আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। গড় মেদিনীপুরের শক্তিশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিদ্রোহ সম্ভবনা তৈরি করেছে বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের।
মুকুল রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো একের পর এক তৃণমূল নেতার দল থেকে বেরিয়ে আসায় শুরু হয়েছে তৃণমূলের অস্তিত্বের সঙ্কট। সেই সঙ্কটকে বাড়িয়ে তুলে তৃণমূলের আরও কয়েকজন বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। যা বাংলার রাজনীতিতে পালাবদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে।
বাংলার রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারী এই উত্থান একদিনে হয়নি। জন্ম হয়েছে রাজনৈতিক পরিবারেই। বাবা শিশির অধিকারি কংগ্ৰেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া নেতা। তিনবারের এমপি। ছিলেন মনমোহন সিং সরকারের গ্ৰামীণ উন্নয়ন দপ্তরের কেন্দ্রিয় মন্ত্রী। শুভেন্দু নিজেও ছিলেন ইউপি -১, ইউপি-২ সাংসদ। পরিবারের অন্য সদস্যরাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ভাই সৌমেন অধিকারি কাঁথি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। আর এক ভাই দিবেন্দু অধিকারী তমলুক কেন্দ্রের সাংসদ। এমন পরিবার থেকে এসে একক দক্ষতায় উঠে এসেছেন রাজনীতির প্রথম সারিতে। যেখান থেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছেন খোদ মমতাকেই।
শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক উত্থান নন্দীগ্ৰাম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে তিনি শক্তিশালী সিপিএমকে রুখে দেন। প্রতিপক্ষ সিপিএমের স্ট্রংম্যান লক্ষণ শেঠকে ভোটে ১,৭২,৯৫৮ ভোটে হারিয়ে চমকে দেন বাংলার মানুষকে। কন্টাইয়ের বিধায়ক থেকে হয়ে ওঠেন এক সময় তৃণমূলের মুখ।
পঞ্চাশ বছরের শুভেন্দু অধিকারীর জন্ম ১৯৭০ সালে। নেতাজি ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ওফ আর্টের ডিগ্ৰি অর্জন করেন। ২০০৬ সালে কাঁথি দক্ষিণ কেন্দ্র জয়ী হয়ে বাংলার বিধানসভায় আসেন। একই বছর কাঁথি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০৭ সাল থেকে নন্দীগ্ৰাম আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সাফল্যের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে জঙ্গল মহল, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় দলীয় অবজারভারে দায়িত্ব দেন।
২০০৯ সালে তমলুক কেন্দ্র থেকে তিনি লোকসভায় যান। ২০১৪ সালে পুনরায় লোকসভায় যান। ২০১৬ সালে বাংলার বিধানসভায় আসায় তমলুক কেন্দ্রের এমপির পদ ছেড়ে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় দফার সরকারে পরিবহন মন্ত্রী হিসাবে যোগ দেন। তার একার শক্তিতে তৃণমূল স্তরের এই নেতা মেদিনীপুরের বিস্তির্ণ অঞ্চলে দলের শক্তিকে বাড়িয়ে তোলেন। মুর্শিদাবাদ ও মালদার অবজারভার হিসাবে তিনি কংগ্ৰেসের ভাঙন ধরান।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটে বিজেপি ৪২টি সিটের মধ্যে ১৮টি সিট পেলে শুভেন্দুকে বাইপোলের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। শুভেন্দু এখানে জয় নিশ্চিত করেন। তবে দলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান ঘটলে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মতো বিরোধ শুরু হয়। একের পর দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন।
২০২০ সালে ২৬ নভেম্বর হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৭ নভেম্বর পরিবহন মন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগ করেন। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তে বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে তার বিধায়ক পদের ইস্থাফা দেন। শেষ হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমা।
শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতার পদত্যাগ তৃণমূলের কাছে যে বড় বিপর্যয় বলেই মনে করছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। যার প্রভাব শুধু তৃণমূলে নয় বাংলার রাজনীতিতেও সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে।