নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। অথচ অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ১৯৬৭ সালের ৭ই জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুর এর এক মুসলিম পরিবারে জন্ম শাহাবজাদে ইরফান খানের। ইরফানের মা বেগম খান টঙ্ক হাকিম পরিবারের উত্তরসূরী ছিলেন। তবে বাবা যোগীরদর খানের টায়ারের ব্যবসা ভালো মতো চলেনি। ফলত টাকার অভাবে তাঁর জীবনের অনেক স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেছে। মুসলিম পাঠান পরিবারের ইরফান ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। সিকে নাইডু ট্রফি খেলেছিলেন তিনি। অভাব পারিবারিক দুরাবস্থার ফলে সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি।
স্বপ্ন ছিল ক্রিকেট, চলে এলেন অভিনয়ের জগতে। পরিস্থিতির কাছে হার না মানা ইরফানের জীবনটা আসলে এক সত্যকারের যোদ্ধার গল্প। ১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্কলারশিপ পেয়ে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেছিলেন ইরফান। ড্রামাটিক আর্টসে ডিপ্লোমা ছিল তাঁর।
তবে বলিউডে প্রথম ছবি করে অ্যাক্যাডেমি আওয়ার্ডের জন্য তিনি নমিনেশনের পর আর তাঁকে কখনো পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউড থেকে হলিউড সর্বত্রই তাঁর নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছিল। বলিউডে প্রথম পা রাখেন তিনি ‘সালাম বোম্বে’ মুভির মধ্য দিয়ে। সালটা ছিল ১৯৮৮। এই ছবি তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ১৯৯৫ এর ৩ রা ফেব্রুয়ারি তিনি বিয়ে করেন সুতপা শিকদারকে। তাঁর দুই ছেলে বাবিন ও আয়ান ছিল তাঁর জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।
২০১৮ সালের ৫ই মার্চ প্রথম খারাপ খবরটি আসে। নিজের ট্যুইটারে ইরফান জানিয়েছিলেন, তাঁর টিউমারের কথা। ১৬ ই মার্চ আরও একটি ট্যুইট করেন তিনি, যেখানে তিনি জানান যে তাঁর নিউরো এন্ডোক্রাইন টিউমার হয়েছে। সেখানে তিনি আরও লিখেছিলেন, “আমার নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারের চিকিৎসা চলছে। কঠিন হলেও প্রচুর শুভেচ্ছা আশীর্বাদে আমি আশাবাদী। আরেকটা কথা হল নিউরো মানেই ব্রেন নয়। গুজব ছড়াচ্ছে ব্রেন টিউমারের। জানতে গুগোল করতে পারেন। আমার আশা আমি শীঘ্রই ফিরব।”
হ্যাঁ, কঠিন রোগ নিয়েও লড়াই করেছিলেন তিনি। আশাবাদী ছিলেন সুস্থ হয়ে ওঠার। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে নক্ষত্র পতন ঘটবে তা কেউই ভেবে উঠতে পারেননি।মঙ্গলবার অভিনেতার শরীর খারাপ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে মুম্বাইয়ের আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাতে অভিনেতাকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়েছিল। আর আজ বুধবার সকালে আসে দুঃসংবাদটি। মাত্র ৫৩ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান অভিনেতা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে বা বলা যেতে পারে চলে গেলেন নিজের মায়ের কাছে।
হ্যাঁ, মাত্র চারদিন আগেই ইরফানের মা সাহিদা বেগমের মৃত্যু হয় বার্ধক্যজনিত রোগে। মৃত্যুকালে ইরফানের মায়ের বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। সারা দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে মায়ের মৃত্যুতেও জয়পুর যেতে পারেননি ইরফান। আর মায়ের মৃত্যুর ৪ দিনের পরই মারা যান ছেলে ইরফান। কী অদ্ভুত যোগসূত্র মা আর ছেলের। আজ সকালেই চলে গেলেন আশির দশকের বিখ্যাত অভিনেতা ইরফান, পরে রইলো তাঁর অজস্র স্মৃতি। বলিউড থেকে হলিউডের সকল মানুষই শোকাচ্ছন্ন এই নক্ষত্র পতনে। আমরা ‘BanglaXp’-এর তরফ থেকে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। তিনি জান্নাতবাসী হন।