নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯, রইলো বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিজেপি দ্বিতীয়বার কেন্দ্রে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফিরে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে একের পর এক বিল সংশোধনের কাজ। বিতর্কিত বেশকিছু ধারা বা বিলের বিলোপ ঘটেছে বা সংশোধন হয়েছে ভারতের ইতিহাস থেকে, যার মধ্যে ৩৭০ অন্যতম উল্লেখযোগ্য। ৩৭০ বিলোপের সরগরম হয় গোটা দেশ, শুধু দেশ নয়, যা হয়ে ওঠে বিশ্বের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

তবে এখানেই শেষ নয়, এই সকল সংশোধনী বিলের মধ্যে আরও একটি অন্যতম বিল হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম দেশ, এই লোকসভায় পেশ করার আগে থেকেই দেশজুড়ে নানান জায়গায় শুরু বিক্ষোভ। মঙ্গলবার মধ্যরাতে লোকসভায় ৩১১টি ভোট পেয়ে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯৷ যার পরও বিলের বিরোধিতায় সরব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। উত্তর-পূর্ব ভারতে অসম সহ বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ ও বনধ৷ কিন্তু এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কি? কেনই বা এই বিলকে নিয়ে এত প্রতিবাদ, বিক্ষোভ? রইলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য…

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯-এ ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এই বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আগত অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে৷

ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রয়েছে এই বিলে। ২০১৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর বা তার আগে আসা ধর্মীয় নিপীড়িতরা নাগরিকত্ব পাবেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী, ভারতে জন্মগ্রহণকারীদের বা ভারতে ১১ বছর বা তার বেশি সময় বসবাসকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়৷ নতুন বিলে সেই সময়সীমা কমিয়ে করা হয়েছে ৬ বছর।

নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীর জন্মের সংশাপত্র না থাকলে নতুন বিলে অনুযায়ী বলা হয়েছে, তাঁরা ছ’বছর দেশে থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি ছিল। এছাড়াও সংসদীয় দলের বৈঠকে গত সপ্তাহে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্পষ্ট করে দেন যে, এই বিলটি সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ সংবিধানের ষষ্ঠ শিডিউলের আওতাধীন অঞ্চলগুলি যেমন অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের উপজাতি অধ্যুষিত স্বায়ত্তশাসিত এলাকাগুলিতে এই বিল কার্যকর হবে না। ইনার লাইন পারমিট রেজিম থাকায় অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ কার্যকর হবে না।

বিরোধীদের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯ বিল সংবিধানের ১৪ ধারাকে লঙ্ঘন করছে। যে ধারা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমতার অধিকারের কথা বলেছে৷ কিন্তু এই বিল ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যে কারণেই বিরোধীদের এত প্রতিবাদ।

পাশাপাশি এই বিলের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে NRC প্রসঙ্গ বলেও মনে করছেন বিরোধীরা। কারন বারবার বিজেপি নেতাদের মুখে উঠে এসেছে ‘দেশজুড়ে এনারসি করার কথা’। আর তারা বারবার বলেছেন এনআরসি হওয়ার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ পাশ করা হবে। তাই বিরোধীদের মত, এই বিল পাশের মধ্য দিয়েও এনআরসির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, লোকসভায় এই সংশোধনী বিল পাশ হলেও বুধবার বিলটিকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাশ করাতে হবে কেন্দ্রকে। বিল পাশ করানোর জন্য কেন্দ্রের প্রয়োজন ১২১। এনডিএ-র পক্ষে রয়েছে ১১৬, অন্যান্যদের তরফে ১৪ নিয়ে তারা ১৩০-এ পৌঁছে যাবে বলে আশা কেন্দ্রের।