শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : আমাদের রাজ্যে নিম্ন শ্রেণী থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত, সব মানুষের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা থেকে শুরু করে ওষুধের ব্যয়ভার বহন করা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সেকারণেই অধিকাংশ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তরা সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবার ওপরেই অধিকমাত্রায় নির্ভরশীল। সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দামী ওষুধ রোগীদের বিনা পয়সাতেই দেওয়া হতো। এতদিন ধরে তাই চলে এসেছে।
কিন্তু এবার সেক্ষেত্রে ভাটা পড়তে চলেছে। ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে ওষুধের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে এমন কিছু ওষুধ, যা গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই সেই সঙ্গে মধ্যবিত্তের কাছে সেই সমস্ত ওষুধ কেনা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলত চরম বিপাকের মধ্যে পড়েছেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী তথা রোগীর পরিজনেরা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদ পড়া ওষুধের তালিকায় রয়েছে ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের ওষুধ। তার মধ্যে সিসপ্লাটিন, এটোপোসাইড, সাইক্লোফসফামাইড, এনোক্সাপারিন রয়েছে। অভিযোগ উঠছে, একাধিক দামী ওষুধের পরিবর্তে রোগীদের অপেক্ষাকৃত অল্প মূল্যের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে ডায়াবেটিসের দামী ওষুধ লিনাগ্লিপটিনের জায়গায় টেনেগ্লিপটিনের মতো স্বল্প দামের ওষুধ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বার্ষিক ৭০০ কোটি টাকা বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের খাতে বরাদ্দ হয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দামী ওষুধ রয়েছে। যাদের বছরে খরচ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। বর্তমানে অধিক মূল্যের ওষুধের ক্ষেত্রে কিছুটা রাশ টেনে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে অপচয় বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও সরকারের এই পদক্ষেপে ভিন্নজনের ভিন্ন ভিন্ন মত। সাংসদ তথা চিকিৎসক ডাঃ শান্তনু সেনের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বহু প্রাইভেট চেম্বারের ক্ষেত্রে এক শ্রেণীর মানুষ দামী ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখে দেওয়ার পর সেই ওষুধ সরকারি হাসপাতাল থেকে আবার জন্য রোগীকে নির্দেশ দেন।এই ধরনের কাজ যে অত্যন্ত নিন্দাজনক তা তাঁর বক্তব্য থেকেই জানা গিয়েছে।
বহু চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকেও রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ক্ষোভ দেখানো হয়েছে। Association Of Health Service Doctors নামক এক সংগঠন এই বিষয়ে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দুতে বলেছেন, রাজ্যে অন্যান্য খাতে খরচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করাটাই শ্রেয়। এরপর দেখার পালা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের উপর কতোটা প্রভাব ফেলে।