অক্লান্ত পরিশ্রম করে অসময়ে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে নজির গড়ছে ‘সময়ের বাতিঘর’

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসে সংক্রামিতদের সংখ্যা। আর এই সংক্রমণের শৃঙ্খলকে ভেঙে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে জারি হয়েছে লকডাউন। আর এই লকডাউনে দেশের কোটি কোটি মানুষ সমস্যায়, সবথেকে বেশি সমস্যায় দিনমজুর, ভবঘুরে ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা। কারণ এই সকল মানুষগুলোর হাতে সঞ্চয় বলতে কিছু নেই বললেই চলে। কারোর সংসার চলে প্রতিদিনের রোজগারের উপর, কারোর আবার প্রতিদিনের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে উপার্জিত অর্থের উপর। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব দরজা বন্ধ। তবে কথায় আছে, ‘জীবনে যখন একটি দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন আর একটি দরজা খুলে যায়’। আর এই প্রবাদকে বাস্তব রূপ দিচ্ছেন বীরভূমের রামপুরহাট শহরের বেশ কিছু যুবক তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে। দেশের অসময়ে, দশের অসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।

রামপুরহাটের এই যুবকের বেশিরভাগ সদস্যরা খুব সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। কেউ ছোট ব্যবসায়ী, কেউ বেকার, আবার কেউ কলেজে পড়ুয়া, আছেন শিক্ষকরাও, রয়েছেন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরাও, রয়েছেন সাংবাদিকরাও। আর তারা সকলে একত্রিত হয়ে ‘সময়ের বাতিঘর’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপ তৈরি করেছেন। আর এই গ্রূপের মাধ্যমে চলছে তাদের কার্যকলাপ। এদিক ওদিক থেকে চলছে অর্থ সংগ্রহ, কেউ কেউ আবার তাদের কার্যকলাপ দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন অর্থ, সামগ্রী অথবা ওষুধ নিয়ে এই সকল যুবকদের পাশে দাঁড়াতে। আর এইগুলিকেই সম্বল করে ওই যুবকেরা দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে চলেছেন দুঃস্থদের মুখে হাসি ফোটাতে।

বিগত ১০-১২ দিন থেকে এই যুবকেরা তাদের কার্যকলাপ শুরু করেছেন। কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা প্রতিদিন কখনো ৫০ জন, কখনো আবার ৭০ জনের সামনে চাল, ডাল, চিড়ে, গুড়, আলু, সোয়াবিন, তেল-মসলা, সাবান, দুধের প্যাকেট এমনকি প্রয়োজনমতো ওষুধ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আর এই অসময়ে এই সকল জিনিস হতদরিদ্র পরিবারগুলো হাতের কাছে পেয়ে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন ওই যুবকদের উদ্দেশ্যে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যখন সরকার আমজনতাকে নির্দেশ দিচ্ছেন নিজেদের গৃহবন্দী করে রাখতে, তখন অনেক মানুষকেই দেখা যাচ্ছে নানান অজুহাতে একবার অন্তত পক্ষে বাড়ির বাইরে বের হতে। আর এই বের হওয়াটা কতটা বিপদজনক সেটা বুঝেও না বোঝা। আর এমন মুহূর্তেই এই সকল যুবকরা নিজেদেরকে উজাড় করে দিচ্ছেন সরকারি নির্দেশিকা, সরকারি পরামর্শ পালন করেই। এই গ্রূপের আরও একটি মহৎ গুণ হলো, তারা যাঁদের এই সকল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন তাঁদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিতে নারাজ। তাদের ছবি দিলেও মুখ ঢেকে দিন তারা। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, ‘আমরা ওই হতদরিদ্র মানুষগুলোর ছবি সকলের সামনে এনে তাঁদের লজ্জা দিতে চাই না’। অমিতাভ হালদার, রাহুল মন্ডল, নীলকান্ত দাস, অবিনাশ দাস, সুলতান খান, টিটু প্রসাদ, জগন্নাথ চঙ্গদারের মত ‘সময়ের বাতিঘর’ সদস্যদের কাজকর্ম প্রকাশ্যে আসতেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নেটিজেনরা।