লাল্টু : ৬০ বছর ধরে বাংলা সিনেমা অভিনয় করে তিনি এনেছিলেন রেনেসাঁ। বাংলার রেনেসাঁর সেই শেষ প্রতিনিধি আজ প্রয়াত। তবে প্রয়াত কেবল তাঁর পার্থিব শরীর, আজীবন অমর থাকবে তাঁর সৃষ্টি।
এই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যিনি বাংলা সিনেমা জগতের ফিদেল, যাঁকে আজ আমরা পার্থিব জগৎ থেকে হারালাম সেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দুবরাজপুরে প্রথম দেখা গিয়েছিল ‘অভিযান’ সিনেমায়। সত্যজিৎ রায়ের এই সিনেমাটি বেশিরভাগ অংশ তৈরি হয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর মামা ভাগ্নে পাহাড় এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযান উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে। সত্যজিৎ রায় সিনেমাকে তার নিজস্ব রূপ দিতে বেছে নেন বীরভূমের মত রাঢ়বঙ্গে শুটিং করার। সিনেমায় ছিল বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী রাজপুত জাতির কিছু মানুষ। সেই সমাজের প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা মানুষ এবং নতুন যুগের গাড়ির আগমন নিয়ে এক ভিন্ন ধারার সিনেমা বানান সত্যজিৎ রায়।
এই সিনেমায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেন বদমেজাজী ট্যাক্সি চালক নরসিং-এর চরিত্রে। যে ট্যাক্সি চালকের তার নিজের ট্যাক্সি নিয়ে ছিল গর্ব। যে ট্যাক্সিতে তিনি সেসময় সকলকে চাপার অধিকার দিতেন না। আর এই ট্যাক্সি নিয়েই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নরসিং-এর রূপে ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভিং করেছিলেন দুবরাজপুরের পাঁচরা এলাকায়। যে জন্য নাকি পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁকে বকাঝকা করেছিলেন।
https://youtu.be/kdBEMfVsB84
এই অভিযান সিনেমা এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে দুবরাজপুরের নাট্যব্যক্তিত্ব বাপি কুন্ডু জানান, “তিনি যখন দুবরাজপুরে অভিযান সিনেমায় অভিনয় করতে আসেন তখন আমরা অতটা বড় হয়নি। তবে পরে যখন অভিযান সিনেমাটি দেখি তখন দুবরাজপুরকে চিনতে পারি সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরায়। অভিযান সিনেমায় সিংজি যেখানে প্রথম গাড়িটা নিয়ে এসে দাঁড় করালেন সেটা হলো পোদ্দার বাঁধ। যেখানে বাস এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চালানোর ট্যাক্সি একটা রিক্সি ড্রাইভিং করে বেরিয়ে যাচ্ছে সেটা হল পাঁচড়া। যেখানেই সিনেমার তাঁবু থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একজন শিল্পীকে সেটা আশ্রমের মাঠ।”
তাইতো এই অভিনেতার চলে যাওয়ায় বাঙালি মন আজও বলছে, “আরও কিছুক্ষণ না হয় থাকলে পাশে।” ‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা রবে।’ তবুও এই অভিনেতার থেকে আরও কিছু পাওয়ার আশা বাকিই থেকেই গেল বাঙ্গালীদের।