DA-র আন্দোলনের পাল্টা! ঠিক সময়ে কর্মীদের অফিসে আনতে মোক্ষম দাওয়াই নবান্নের

এ যেন ঠিক নিউটনের তৃতীয় সূত্র। প্রত্যেক কর্মের বিপরীত প্রতিক্রিয়া। বকেয়া ডিএ নিয়ে রীতিমতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। আর এবার তাদের বিরুদ্ধেই কড়া পদক্ষেপ করল নবান্ন। অনেকেই বলেন, সরকারি কর্মীরা নাকি সুখে থাকেন। কাজের চাপও তেমন নেই। তবে আর যখন তখন ঢোকা যাবে না অফিসে। ইচ্ছেমতো সময় শেষ হওয়ার আগে বেরিয়েও যাওয়া যাবে না অফিস থেকে। সম্প্রতি এমনই কড়া পদক্ষেপ করছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ ভবন নীল বাড়ি।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এবার সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতি নিয়ে কড়া বিষয় চিন্তা ভাবনা করেছে নবান্ন। কর্মীরা কখন অফিসে আসছেন, কখন অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, সমস্ত কিছুই এবার থাকবে সরকারের নখ দর্পণে। বেসরকারি অফিস গুলিতে হাজিরা নিয়ে যেমন কঠোর নিয়মের কথা প্রচলিত রয়েছে, হয়তো এবার তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদেরও। এরপর আর সই করে ঢুকে গেলেই হবে না। দেখাতে হবে মুখ। তাও আবার সময় মতো। নইলে পড়তে হতে পারে বিপদের মুখে।

ডিএ নিয়ে সরকারি কর্মীদের আন্দোলনের মধ্যেই রাজ্য সরকার এ বার দপ্তরে হাজিরা নিয়ে কঠোর হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি কর্মীদের অফিসে আসা নিশ্চিত করতে আর আঙুল ছুঁয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে হবে না। পরিবর্তে আনা হচ্ছে ফেস রেকগনিশন বায়োমেট্রিক। কর্মীরা অফিসে এসেই এই নতুন মেশিনের সামনের দাঁড়াতেই তার ছবি উঠবে।

সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সার্ভারে সময় ধরে তাঁর উপস্থিতি রেকর্ড হয়ে যাবে। অফিস ছাড়ার সময়েও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, যাতে কর্মীর নিয়ম মেনে অফিস ছাড়ার সময়ও রেকর্ড হয়। আগামী ২ মে থেকে নবান্নতে রাজ্য সরকার কর্মীদের এই নয়া হাজিরা ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে নবান্নে কর্মরত সরকারি কর্মীদের সওয়া দশটার মধ্যেই অফিসে আসতে হবে।

দেরি হলে ‘লেট মার্ক’ পড়ে যাবে সরকারি খাতায়, যা কাটানোর কোনও সুযোগ থাকছে না। তিন দিন লেট হলে নিয়ম মেনে ওই কর্মীর একটি ক্যাজুয়াল লিভ (সিএল) কাটা হবে। সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করার কথা। নিয়ম মেনে সওয়া পাঁচটার আগে অফিস ছাড়া যাবে না। কোনও অফিসার নয়, এই নজরদারিও করবে এই নয়া মেশিন।

প্রথম দফায় শুধুমাত্র নবান্নে এই নয়া ফেস রেকগনিশন বায়োমেট্রিক বসানো হচ্ছে। এর দায়িত্বে রয়েছে ওয়েবেল টেকনোলজি লিমিটেড(ডব্লিউটিএল)। নবান্নর প্রতিটি তলায় তিনটি করে মোট ৪২টি মেশিন বসানোর কাজ শেষ। খরচ হচ্ছে ২৫ লক্ষ টাকা। প্রায় আড়াই হাজার সরকারি কর্মী নবান্নে কাজ করেন। প্রত্যেকের সরকারি আইডি নম্বর ইতিমধ্যেই সার্ভারে রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বুধবার থেকেই কর্মীদের ছবি তোলার কাজ শুরু হবে। পরে ধাপে ধাপে সমস্ত সরকারি অফিসেই হাজিরার এই নয়া ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

মহাকরণ থেকে রাজ্যের সচিবালয় নবান্নে স্থানান্তর করার পরই ২০১৪ সালে আগস্ট-সেপ্টম্বর মাসে কর্মসংস্কৃতির প্রশ্ন তুলে কর্মাচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। পরে ধাপে ধাপে খাদ্য ভবন, নগরায়ন-সহ একাধিক সরকার দপ্তরে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়। সেই সময়ে নবান্নে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে ল্যান লাইন বসিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল।

কিন্তু নবান্নে সচিবালয় স্থানান্তরের জেরে সময় মতো হাজিরা নিয়ে পরিবহণের সমস্যার কথা তুলে রাজ্যের শাসকদলের কর্মচারী সংগঠনের একাংশের অনুরোধে তা আজও কার্যকর করা যায়নি। ফলে অব্যবহৃত মেশিনগুলি বদল করে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দপ্তর হাজিরা কড়াকড়ি করতে ফেস রেকগনিশন বায়োমেট্রিক যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু এর জন্য নতুন করে ল্যান লাইন ও সার্ভার বসাতে হচ্ছে না, তাই খরচ অনেকটাই কমেছে।

রাজ্য সচিবালয়ের প্রধান অংশটি মহাকরণ থেকে নবান্নে স্থানান্তরের পর সরকারি কর্মীদের একটা বড় অংশের মধ্যে প্রচুর ছুটি পাওয়ার পরেও সময়মতো অফিসে না আসার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। অনেকে সকাল এগারোটার আগে অফিসে আসেন না। অনেকে তারও পরে আসেন। আবার বিকেল চারটের পর থেকেই বাড়ি ফেরার তাড়া শুরু হয়ে যায়। জেলাগুলিতেও একই চিত্র। মুখ্যসচিব একাধিক বৈঠকে জেলাশাসকদের এ নিয়ে বিশেষ সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নবান্ন কর্তাদের কথা, এবার জেলাগুলিতেও একই ব্যবস্থা কার্যকর করার প্রস্তাব রয়েছে।