‘খামতি’, স্বস্তিকার ফেসবুক পোস্টের পর ফের মুখ খুলতে দেখা গেল শ্রীলেখাকে

নিজস্ব প্রতিবেদন : সুশান্ত সিং রাজপুতের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পরই রঙিন, গ্লামারস অভিনয় জগতের অন্ধকার দিক নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন অভিনয় জগতের লোক থেকে সাধারণ সিনেমা প্রেমীরা। উঠে আসছে স্বজনপোষণ, গ্ৰুপবাজী, সিনেমা জগতের বাইরের প্রতিভাবানদের জায়গা না ছাড়া এবং অভিনেত্রীদের আপোষ করার মতো তত্ত্ব। আর এর ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছে বাংলার সিনে জগতের অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যেও।

জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী মুখ খোলার পর, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শ্বাশ্বত, অভিষেক, রুদ্রনীল, শ্রীলেখা মিত্রের মতো বাংলা সিনেমা জগতের ব্যক্তিরা একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন শ্রীলেখা মিত্র। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সৃজি‌ৎ মুখার্জি, স্বস্তিকার মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। আর তারপর থেকেই একের পর এক অভিনেতা অভিনেত্রী মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

যে বিস্ফোরক অভিযোগ নিয়ে বাংলা সিনে ইন্ড্রাস্ট্রী তোলপাড় তা শ্রীলেখার কথায়, “তখন ইন্ডাস্ট্রিতে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়), দীপক দা (চিরঞ্জিত), তাপস দা (তাপস পাল) এবং বাইরে থেকে মাঝে মাঝে রনিত রায়ের মত নায়করা আসতেন। কিন্তু বুম্বাদা এক নম্বরে। তখন বুম্বাদার বোনের চরিত্র করেছি। আমি জানতাম আমার নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা আছে কিন্তু পারিনি কারণ তখন ঋতুপর্ণার সঙ্গে বুম্বাদার প্রেম।”

তিনি আরও বলেন, “আমি দেখেছি বুম্বাদা ফ্লোরে চেয়ারের উপর পা তুলে বসে আছেন। মাটিতে বসে আছেন পরিচালক। ঋতু দেরি করে আসত। আমরা সময়ে এসেও বঞ্চিত। তাছাড়া তখন ঋতুপর্ণা প্রসেনজিৎ জুটি তৈরি হয়ে গেছে। ছবি হিট হোক আর না হোক ওরাই করবে।”

সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে আক্ষেপের সঙ্গে শ্রীলেখা জানান, “সৃজিত আমার অনেক পুরনো বন্ধু, কিন্তু প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর আমাকে কোন ছবিতে নেয়নি।” পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে সরাসরি এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “চূর্ণী কোথাও কাজ পায় না, তাই আমার ছবিতে ওকে নিতেই হবে!” শ্রীলেখার দাবি, “ইন্ড্রাস্ট্রিতে আমার কোন গডফাদার নেই। আর তাবেদারি করতে না পারার মাশুল দিতে হয়েছে।”

অভিনেত্রী সুদীপ্তার কথা প্রসঙ্গে রবিবার স্বস্তিকা ফেসবুকে লেখেন, “খামতি, এই কথাটা তাই সবচেয়ে দামি। আমি কোনওদিন শুভশ্রীর মতো নাচতে পারব না। বিকিনি পরে শট দিতেও পারবো না। আমার চেহারা বিকিনি পরার মতো নয়, আমি অত ভালো নাচতেও পারি না। আবার সুদীপ্তার মত চরিত্রও করতে পারবো না। ওরা যা পারে, সেজন্য ওরা যেসমস্ত কাজ পায় বা পাবে, আমি সেটা না পেলে নিশ্চয় আক্ষেপ থাকবে। তবে তাতে আমার কেরিয়ারের জন্য আমি ওদের দায়ী করতেও পারি না। আমাকে আমার কাজটাই করতে হবে, খামতিগুলি ঠিক করার চেষ্টা করতে হবে। অভিনেত্রী হিসাবে আমার দায়িত্ব রয়েছে। আদপে তো এটা ব্যবসা, কেউ সমাজসেবা করতে আসেননি। হর্ষ নেওটিয়ার ব্যবসা উনার ছেলেই দেখবে, পাশের বাড়ির ছেলে নয়। এটাই স্বাভাবিক।”

এছাড়াও রবিবারের সেই পোস্টেই স্বস্তিকা সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রসঙ্গ টেনে সুদীপ্তাকে পাল্টা দেন, “দর্শক হিসাবেও আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তারকা সন্তান, যাঁরা অভিনয় পারেন না বলছি, তাঁদের ছবি হিট হচ্চে কী করে? সুশান্তের রবতা, ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ল কেন? একটা ছোট শহরের ছেলে নিজের দক্ষতায় যখন জায়গা করছে, তখন দর্শকদের পাশে থাকার দরকার ছিল, করেছি কি আমরা? ভবিষ্যতে কি করব? করব না। আমরা সুযোগ পেলেই একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাবো।”

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় শ্রীলেখার বিরুদ্ধে পাল্টা দিয়ে উভকামী ও সুযোগ সন্ধানীর তত্ত্ব তুলে এনেছেন। তাঁর বক্তব্য পরিচালকের সঙ্গে বিছানায় শুয়ে বা প্রেম করে কোন নায়িকা যদি সুযোগ পায় তবে যেসব অভিনেতারা পরিচালকের কাছ থেকে অনেকবেশি সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা নিশ্চয় উভকামী ও সু্যোগ সন্ধানী!

আর রবিবারের স্বস্তিকার ‘খামতি’ প্রসঙ্গে ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শ্রীলেখা পাল্টা লেখেন, “Mediocrity threatened by Talent…. thats my answer. আর জ্বালিওনা বাপু যা খুশি করোগে যাও আমার ‘খামতি’ নিয়ে আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।”

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সব বয়সি পুরুষের সঙ্গে যেভাবে কথা বলতে পারে সেভাবে শ্রীলেখা পারেন না বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। অভিনেতা অভিষেকও ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন বাংলা সিনেমার রাজনৈতিক চক্রে তাঁর অভিনয় জগত শেষ হয়ে গেছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে অভিনয় জগতের অন্ধকার দিক কিন্ত উঠে এসেছে এনিয়ে দ্বিমত নেই কারো। আর তারজন্য উঠে আসছে শুদ্ধি করণের বিষয়ও। তবে শুদ্ধিকরণ কতটা হল এই অভিযোগের ঢেউ পেরিয়ে যাবার পরই বোঝা যাবে, না চলবে আগের মতোই তা বলবে ভবিষ্যতের চিত্রনাট্য।