নিজস্ব প্রতিবেদন : এতদিন পর্যন্ত একটি চেয়ার নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। কখনো বসেছেন মন্ত্রী কন্যা, আবার কখনো বসেছেন মামলাকারী। আবার তাকে সরিয়ে বসেছেন আরেক মামলাকারী। একজনের চেয়ার ছাড়া, আর একজনের বসা এই নিয়ে রীতিমতো ওই চেয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল মিউজিক্যাল চেয়ার। তবে শেষমেশ সোমবার সেই মিউজিক্যাল চেয়ারও ফাঁকা হতে হলো। সোমবার ওই মিউজিক্যাল চেয়ার পুরোপুরি ভাবে ফাঁকা হয়ে যায় মূলত কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে।
২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে যে সকল গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর নিয়োগ হয়েছিল সেই সমস্ত নিয়োগ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পর চাকরি হারান ২৩ হাজার ৭৫৩ জন। এরপরই চাকরি হারানো ২৩ হাজার ৭৫৩ জনকে নিয়ে শুরু হয় জোড় আলোচনা। তবে তাদের মধ্যে একটু আলাদাভাবেই আলোচনায় চলে এসেছেন তিনজন।
যে তিনজন জোড় আলোচনায় চলে এসেছেন তাদের মধ্যে প্রথম হলেন রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। যিনি ২০১৬ সালের এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষিকা হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল এবং ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টে তাদের নাম ওঠার পর ২০ মে তার চাকরি বাতিল হয় হাইকোর্টের নির্দেশে।
অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি যাওয়ার পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের জেরার মুখে পড়েন পরেশ অধিকারী। দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে যাওয়ার কারণে তাকে খোয়াতে হয়েছিল মন্ত্রিপদ। অন্যদিকে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি আদালতের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল চাকরি প্রার্থী মামলাকারী ববিতা সরকারকে। নম্বরের ভিত্তিতে ববিতা সরকার এগিয়ে থাকার কারণেই সেই চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। ববিতা সেই চাকরি প্রার্থী যিনি অঙ্কিতার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। অন্যদিকে এই মামলায় জয়লাভ করে চাকরি পাওয়ার পাশাপাশি ববিতা পেয়েছিলেন অঙ্কিতার বেতনের ১৪ লক্ষ টাকা।
তবে ববিতার আনন্দের মুহূর্ত বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কেননা ববিতার বিরুদ্ধে আবার মামলা করেছিলেন আরেক চাকরি প্রার্থী অনামিকা রায়। সেই মামলায় আবার অনামিকা রায় জয়লাভ করলে তিনি ববিতার চাকরি পান ২০২৩ সালের ২৬ মে। ববিতার হারানো চাকরি অনামিকা পাওয়ার পাশাপাশি অঙ্কিতার চাকরির বেতন বাবদ যে ১৪ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তাও ববিতাকে ফিরিয়ে দিতে হয় অনামিকাকে। কিন্তু অনামিকার সেই প্রাপ্তিও আবার বেশিদিন স্থায়ী হলো না। অনামিকার এই চাকরি ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল খোয়া গেল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে যে চেয়ারের জন্য এত মামলা সেই চেয়ার আজ ফাঁকা হয়ে গেল।