বদলে গেল ফুল-মিষ্টির দোকান খোলার সময়, বাজার করতেও মানতে হবে নির্দেশিকা

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সম্প্রতি নবান্নকে একটি চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায় তারা তাদের দুটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে পশ্চিমবঙ্গে। এই দুটি দল রাজ্যের মধ্যে স্পর্শকাতর চিহ্নিত হ‌ওয়া ৭ জেলার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন। এর পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তাও খতিয়ে দেখবেন।

রাজ্যের ত্রাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ হচ্ছে কি না, মানুষ কি হারে রাস্তায় বেড়োচ্ছে এবং লকডাউন মানা হচ্ছে কি না এই সকল বিষয়ই তারা ঘুরে ঘুরে দেখবেন। এই প্রতিনিধি দল তিন দিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এসে পৌঁছাবে। এই বিষয়ের উপর সোমবার সকালেই সর্বশেষ চিঠিটি এসেছে নবান্নে। আর তারপর আজ বিকেলেই ফুল-মিষ্টির দোকান খোলা রাখার সময় পরিবর্তন করলো রাজ্য সরকার। এই ফুল মিষ্টি দোকান খুলে রাখার সময়‌ কমিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এপ্রিল মাসের শুরুতেই লকডাউনের কারণে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের ব্যবসাতে লোকসান হ‌তে শুরু করে। এই কারণে রাজ্যের ব্যবসায়ীরা সব দুধ বিক্রি করতে না‌ পেরে পুকুরে ফেলে দিচ্ছিলেন। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আংশিক সময়ের জন্য মিষ্টির দোকানগুলি‌ খুলে রাখতে বলেন। প্রথমদিকে মিষ্টির দোকান খুলে রাখার সময় তিনি করেছিলেন ১২টা থেকে ৪‌টে পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার এই সময় বাড়িয়ে করেছিলেন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত।এখন কেন্দ্রের চাপে এই সময়সীমা আবার কম করে দেওয়া হলো।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি এই ফুল মিষ্টির দোকান খোলা রাখা নিয়ে বিরোধী পক্ষের তীব্র আপত্তি ছিলো প্রথম থেকেই। কারণ এই সময়টা এই লকডাউনটা মিষ্টি খেয়ে উৎসব পালনের জন্য ‌নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে মিষ্টি, ফুলটা পড়েও না। এরপর স্ট্র্যান্ড রোডের জগন্নাথ ঘাট ফুল মার্কেটের ফুল কিনতে যাওয়া মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের ভিডিও ট্যুইট করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এই ফুল মিষ্টির দোকান খোলাই যে রাজ্যকে বিপদে ফেলবে তার বলার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লকডাউন ভাঙার অভিযোগও করেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাবুলের ট্যুইট প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করতে ছাড়েন নি।

“আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আমরা সবরকম সাহায্য কেন্দ্রীয় সরকারকে করব। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যেন বাংলা নিয়ে উল্টোপাল্টা না বলেন। কেউ একটা ছবি ছেড়ে দিল, কেউ একটা ভিডিও ছেড়ে দিল, এসব যেন না হয়!” এরপর ফুল মিষ্টি পর্ব থেমে গেছিলো। বর্তমানে রাজ্যের বেশ‌ কয়েকটি জেলা করোনা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হ‌ওয়ায় আবার ফুল মিষ্টির তরজা প্রকাশ্যে উঠে এলো।

কাল থেকে কতক্ষন খোলা থাকবে মিষ্টির দোকান জানেন?

এই সময়টা চার ঘণ্টা কম করে দিল রাজ্য সরকার। আজ মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বযেন, সকাল ৮ টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ফুল আর মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে।”

ফুল‌-মিষ্টির পাশাপাশি বাজারমুখী জনতাও ভাবাচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এদিন রাজ্যের মুখ্যসচিব এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা চিন্তাভাবনা করছি, বাজারগুলিকে ব্যারিকেড দেওয়া যায় কিনা। যাতে কিছু সংখ্যক লোক ঢুকলো, তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর আবার কয়েকজন ঢুকলেন। এমনটা করা যায় কিনা তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে। তবে এখানে জায়গা ছোটো, লোক অনেক বেশি। এটা আমাদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।”

এছাড়াও পুলিশের তরফ থেকে ফের একবার সতর্ক করে জানানো হয়, “ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি বেশ কিছু জায়গায় বিশেষত গ্রামাঞ্চলগুলিতে অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদির দোকান ছাড়াও আরও অন্যান্য কিছু দোকানের লুকিয়ে খুলে রাখার প্রবণতা রয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি এই কঠিন সময়ে অনেকেই আর্থিকভাবে বিপন্ন। সেইজন্য সরকার সব রকম ব্যবস্থাও নিয়েছে, এছাড়াও আপনাদের খাদ্যজনিত অথবা অন্যান্য যে কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের স্পেশাল কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করুন।”