নিজস্ব প্রতিবেদন : বহু প্রাচীন কাল থেকে রাঢ় বাংলা শাক্ত সাধনার পীঠ। বহু নাম জানা নাম না জানা সাধকেরা গোপনে সাধনা করেছেন এক সময়ের এই জলা জঙ্গল ভর্তি বীরভূমে। তাঁর ক্ষীণ ঐতিহ্য আজও রয়ে গেছে বীরভূমের নানা গ্ৰামে। এমনি একটি পুজো ইন্দ্রগাছার বামাকালী। সিউড়ি শহরের কাছেই ইন্দ্রগাছা গ্ৰামে সাধক রাম কানাইয়ের বামাকালি শাক্ত সাধনার গোপন প্রথা মেনে আজও পুজিত হয়ে চলেছে।
কথিত আছে হরকুনার গভীর জঙ্গলে সাধনা করতে গিয়ে মায়ের সাক্ষাৎ পান সাধক রামকানাই। মায়ের জীবন্ত সাক্ষাৎ সেই রূপ তিনি থালায় এঁকে নেন। জীবন্ত মায়ের সেই রূপের ছবি দেখে বানানো হয় মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি।
পুজোর জন্য লেখেন প্রার্থনার মন্ত্র। যা আজ লোকমুখে রাম কানাইয়ের পুঁথি নামে পরিচিত। গ্ৰামের লোকেরা বলে রাম কানাইয়ের গোপন পুঁথির অর্থ আজও কোন শিক্ষিত মানুষ বার করতে পারেনি। যে থালায় মায়ের জীবন্ত রূপ দেখে ছবি এঁকেছিলেন সে থালা বহু গোপনে সযত্নে রেখে দিয়েছে ইন্দ্রগাছা গ্ৰামের বাসিন্দারা। সাধক রাম কানাইয়ের গোপন পুঁথির নিয়ম মেনে পুজো হয় শতাব্দী প্রাচীন ইন্দ্রগাছার কালি।
লোকমুখে কথিত আছে ইন্দ্রগাছার এই বামাকালী ৫০০ বছর ধরে পুজিত হয়ে চলেছে। প্রায় ১৩ ফুটের এই বামকালীর গায়ের রং ও চক্ষুদান করা হয় পুজোর দিনেই প্রাচীন প্রথা মেনে। গায়ের রং করা হয় কাঠে আগুন জ্বালিয়ে তৈরি ভুসোকালি থেকে।
মূল মন্দির থেকে বেশ কিছুটা দূরে মায়ের কাঠামো ও মূর্তি গড়া হয়। পুজোর দিন রাত্রি দুটো নাগাদ মূর্তিকে ৪০ ফুট বড় লাল কাঠের ওপর চাপিয়ে কাঁধে করে নিয়ে আসা হয় মূল মন্দিরে। পুজোর পর ভাইফোঁটার দিন বিসর্জন হয় সাধক রাম কানাইয়ের বামাকালীর। ৫০০ বছর ধরে চলা যে রীতির আজও কোন পরিবর্তন হয়নি।
কয়েক শতাব্দী ধরে শাক্তপীঠ রাঢ় বাংলায় রামকানাইয়ের বামাকালীর মতো বহু পুজো সহজ সাধনার ধারা বেয়ে, তান্ত্রিক সাধনার পথ দিয়ে গোপন অবগুন্ঠনে, লোকশ্রুতি, ঐতিহ্য ও রহস্য নিয়ে আজও পুজিত হয়ে চলেছে।