মাস্কে লেখা জনপ্রিয় বাংলা গানের লাইন, করোনা রুখতে অভিনব উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বব্যাপী মহামারি সৃষ্টি করেছে করোনা। ভারতেও ২০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ করোনা সংক্রামিত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৪০ জন মানুষের। করোনা সংক্রমণ রুখতে সারা দেশে চলছে লকডাউন। কিন্তু যাদের কথা ভেবে এই লকডাউন তারাই এখনও সতর্ক নন।

সকাল হলেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে ছুটছেন অনেকে। পুলিশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন পরিস্থিতি সামলাতে। অনেক জায়গায় আবার চোর পুলিশ খেলাও চলছে। পুলিশ দেখলেই লুকিয়ে পড়ছেন অনেকে, পুলিশ চলে গেলে আবারও বেরিয়ে পড়ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু জায়গায় ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু যতক্ষণ না সাধারণ মানুষ নিজে সর্তর্ক হচ্ছেন ততক্ষণ কোনো দাওয়াইতেই কাজ হবে না।

এর আগেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে রাস্তায় ফেলুদা, তপসে ও জটায়ুকে দেখা গিয়েছে। রাস্তায় সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট এই বিখ্যাত চরিত্রগুলির ছবি এঁকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এবার বাড়ি থেকে বেরোলেই অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে থোড়াই কেয়ার! মাস্ক ছাড়াই বাজারে বেরিয়ে পড়ছেন অনেকে। পুলিশ প্রশাসনকে রীতিমতো মাস্ক পড়তে বাধ্য করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এবার সাধারণ মানুষকে গানের ভাষায় মাস্ক পড়ানোর চেষ্টা করছেন সুমিত বাবু।

কলকাতার শিয়ালদহের লেবুতলার বাসিন্দা সুমিত বিশ্বাস। বাবা ছিলেন গোয়েন্দা অফিসার। বাবার কাছ থেকেই শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখেন সুমিত বাবু। লকডাউনে বাবার শেখানো মন্ত্র মেনেই লড়াইতে নেমেছেন সুমিত। রঙ-তুলি দিয়ে মাস্কের উপর লিখছেন বিভিন্ন গানের লাইন।

কোনো মাস্কের উপর লিখছেন, ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে’, কোনো মাস্কের উপর লিখছেন, ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’, আবার কোনো মাস্কে লিখছেন, ‘চোখে চোখে কথা বলো, মুখে কিছু বলো না’। শুধু গানের লাইন নয় মাস্কের উপর বিভিন্ন ছবিও আঁকছেন সুমিত বাবু। কোনো মাস্কে আঁকছেন শিব, কোনোটাই দূর্গা, কোনোটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার কোনো কোনো মাস্কে লিখছেন ‘গো করোনা’। হলুদ রঙের মাস্ক বানিয়ে তার উপরেই চলছে এই সৃষ্টির কাজ।

তবে ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশ্যে নয়, সাধারণ মানুষকে সতর্ক করায় সুমিত বাবুর উদ্দ্যেশ্য। সুমিত বাবুর বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা ও একটি পোষ্য কুকুর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তনী সুমিত বাবুর কাজ এখন দেশকে বাঁচাতে করোনা যুদ্ধে সামিল হওয়া।

তাই সকাল হতেই মাস্ক তৈরী কাজে বসে পড়েন সুমিত বাবু। চেনা পরিচিতের মধ্যেই এই মাস্ক বিলি করছেন সুমিত বাবু। সুমিত বাবু বলেন, সকলে যদি প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলি তাতে আমাদের সকলের লাভ। আগামী প্রজন্ম যাতে সুন্দর পৃথিবী দেখতে পায় সেই জন্যেই এত প্রচেষ্টা সুমিত বাবুর।