Ratan Tata Family Members: চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই প্রয়াত হয়েছে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পপতি রতন টাটা। তিনি ছিলেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস, ৮৭ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত সমস্যার জন্যই মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মুম্বাইতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মানের দ্বারাই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের শিল্পজগতে এটি একটি বিরাট নক্ষত্রপতন, কারণ টাটাগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি মজবুত জায়গা করে দেওয়ার মূলে বড় অবদান রয়েছে রতন টাটার। তাঁর প্রপিতামহ প্রবাদপ্রতিম জামশেদজি টাটা ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ। কখনোই এই পরিবারের কেউ প্রচারের আলোয় আসেনি বরং আড়ালে থেকেই কাজ করে গেছে চিরকাল।
যেহেতু টাটা পরিবার কোনদিনও তেমনভাবে প্রচারের আলোয় আলোকিত ছিল না তাই জনসাধারণের এই পরিবার (Ratan Tata Family Members) সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত ধারণা নেই। রতন টাটার মৃত্যুর পর বহু তথ্য সামনে এসেছে। তাঁর বাবা ছিলেন নাভাল টাটা। জানলে অবাক হবেন নাভাল টাটা ছিলেন একজন দত্তক সন্তান। রতনজি টাটা তাঁকে দত্তক নিয়েছিলেন। রতনজি টাটা হল জামশেদজি টাটার সন্তান। টাটা পরিবারের আদিপুরুষ ছিলেন নুসেরওয়ানজি টাটা। তিনি এই টাটা বংশকে এগিয়ে নিয়ে যান। ব্যক্তিগত জীবনে নুসেরওয়ানজি ছিলেন পার্সি পুরোহিত। টাটা পরিবারের প্রথম এই ব্যক্তি ব্যবসা জগতে প্রবেশ করেছিল।
নুসেরওয়ানজির পুত্র হলেন জামশেদজি টাটা। তিনি ছিলেন আসলে গুজরাটের নবসারির বাসিন্দা। জামশেদজি পরবর্তীকালে চলে এসেছিলেন বাণিজ্য নগরী মুম্বাইতে। তার ভাগ্য খুলে গেছিল এই জায়গায় আসার পর থেকে। পুত্রকে আধুনিক তথা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন নুসেরওয়ানজি। জামশেদজিকে (Ratan Tata Family Members) সেই কারণেই খুব অল্প বয়সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল মুম্বইতে। সেখানকার এলফিনস্টোন কলেজ থেকে ‘গ্রিন স্কলার’ হিসাবে সসম্মানে উত্তীর্ণ হন টাটা গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ।
জামশেদজি তার প্রথম জীবনে ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত বাবার সঙ্গে ব্যবসায় হাত লাগিয়েছিলেন কিন্তু ১৮৬৮ সালে ব্যবসায়িক সংস্থা হিসাবে টাটা গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তিনি মাত্র ২১০০০ টাকাকে সম্বল করে এই ব্যবসার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ধীরে ধীরে।জামশেদজিকে ‘ভারতীয় শিল্পের জনক’ বলা হয়। জামশেদজি টাটা ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন একজন ব্যক্তি এবং এই পার্শী পরিবারের(Ratan Tata Family Members) ছেলেটি খুব তাড়াতাড়ি জেনে গিয়েছিল বিভিন্ন ব্যবসায় প্রবেশ করার আসল কৌশল। টাটা গোষ্ঠী প্রথমদিকে জাহাজ সংক্রান্ত ব্যবসায় নিযুক্ত ছিল কিন্তু সংস্থা তৈরির এক বছরের মাথায় কাপড়ের ব্যবসায় পা রাখেন জামশেদজি। মুম্বাই অর্থাৎ তখনকার বোম্বে ছিল বস্ত্রশিল্পের প্রাণকেন্দ্র। তীক্ষ্ণো বুদ্ধিসম্পন্ন জামশেদজির পসার জমাতে বেশি দিন সময় লাগেনি।
জামশেদজি টাটা মুম্বইয়ের কোলাবায় ‘তাজমহল হোটেল’ খোলেন , এটি ছিল ভারতের প্রথম হোটেল যাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং টাটা স্টিল তৈরির ক্ষেত্রেও তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রয়েছে। জার্মানিতে ১৯০৪ সালে তার মৃত্যু হয়েছিল এবং তাঁর বড় ছেলে ছিলেন দোরাবজি টাটা। বাবার মৃত্যু হলে তিনি শক্ত করে ধরেছিলেন ব্যবসার হাল। টাটা স্টিল এবং টাটা পাওয়ারের উত্থানের মূলে তার অবদান অনস্বীকার্য। দোরাবজির ছোট ভাই তথা জামশেদজির কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন রতনজি টাটা। রতনজি টাটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন টাটা গোষ্ঠীর তুলো এবং বস্ত্র ব্যবসাকে।
আরো পড়ুন: ভাগ্য পাল্টাতে পারে রতন টাটার এই উক্তি, রইল বিস্তারিত
রতনজী টাটা বিবাহ করেছিলেন সুজ়ান ব্রিয়ার নামের এক ফরাসি মহিলাকে। এই দম্পতির সন্তানের নাম জাহাঙ্গির রতনজি দাদাভয় টাটা, যিনি বেশি পরিচিত জেআরডি টাটা নামেই। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে জেআরডি টাটা ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। আকাশে চড়তে তিনি খুব পছন্দ করতেন এবং সেই কারণে নিজে বিমান চালানো পর্যন্ত শিখেছিলেন। ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক পাইলটের তালিকায় প্রথম নামটি হল জেআরডি টাটার। টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি এয়ার ইন্ডিয়া নামক বিমান পরিষেবা চালু করেছিলেন।
আরো পড়ুন: রতন টাটার উইলে আছে শান্তনু নাইডুর নাম, কি রাখা হয়েছে তার নামে
জেআরডি টাটা টাটা গোষ্ঠীকে একটি আন্তর্জাতিক বহুজাতিক সংস্থায় পরিণত করার সমস্ত চেষ্টা করেছিলেন। রতনজি টাটার দত্তক সন্তান হলেন নাভাল টাটা। তিনি এই শিল্প সংস্থার উন্নতিতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর নাভাল টাটার স্ত্রী সুনির কোলে আসে এক পুত্রসন্তান। নাভাল টাটা তার পালক পিতার নাম অনুসারে ছেলের নাম রাখেন রতন টাটা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। এছাড়াও ছিলেন অন্তর্বর্তিকালীন চেয়ারম্যান। এই শিল্প সংস্থাকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে রূপান্তরিত করেন তিনি।
জেআরডি টাটা যে বিমান পরিষেবা চালু করেছিল তা স্বাধীনতার পর চলেগেছিল সরকারের অধীনে। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়াকে কিনে আবার তা টাটা গোষ্ঠীর কাছেই ফিরিয়ে আনেন রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীর উন্নতিতে তার অবদান গুনে শেষ করার মত নয়। বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা ফোর্ডের তৈরি ল্যান্ড রোভার ও জাগুয়ারকে তিনি টাটা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ২০০০ সালে পদ্মভূষণ ও ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণে তাঁকে সম্মানিত করে ভারত সরকার। জিম্মি টাটা হল রতন টাটার ভাই। দাদার মতো তার অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। নোয়েল টাটা হলেন রতন টাটার সৎ ভাই। ১৯৫৭ সালে তাঁর জন্ম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। নোয়েল বিয়ে করেছেন আলু মিস্ত্রিকে। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে। তাঁরা হলেন, নেভিল, লিয়া ও মায়া। মানসী কিরলোস্কারের সঙ্গে সংসার পেতেছেন নেভিল। আর বর্তমানে স্পেনে পড়াশোনা করছেন লেহ্। নোয়েলের তিন সন্তানের প্রত্যেকেই টাটা গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন।