দুর্ঘটনা রুখবে বর্ধমানের ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী আবিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদন : অনুপ্রেরণা যার কাছে শ্রদ্ধেয় এপিজে আবদুল কালাম, তার মধ্যে যে বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা থাকবে তা একপ্রকার ধরে নেওয়া যায়। আর এমনই এক বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে আমাদের রাজ্যের ক্ষুদে এক বিজ্ঞানী, যে রাজধানী শহর কলকাতার বাসিন্দা না হয়েও সামান্য জেলার ছোট্ট একটা শহরতলীর বাসিন্দা হয়েও তার কাজের মাধ্যমে এবং উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

আবেগ আর প্রযুক্তির মিশেলে এক অভিনব ডিভাইস বা যন্ত্র আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিল পূর্ব বর্ধমানের মেমারির একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিগন্তিকা বসু। তার এই আবিষ্কার ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে বিজ্ঞান মেলায় সম্মানিত হয়েছে। পাশাপাশি তার আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণাপত্র পাঠের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আহমেদাবাদ) তাকে আমন্ত্রণও জানিয়েছে। তার কথা অনুযায়ী, তার এই নতুন আবিষ্কার যন্ত্র মোটরবাইক বা গাড়িতে ব্যবহার করলে চালকের গাড়িচালনার গতিবিধির পর্যবেক্ষণ করবে। তারপর সেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন আবেগপ্রবণ কথার মাধ্যমে চালককে নিয়ন্ত্রণ করবে ও সতর্ক করবে। আর এই ডিভাইসের খরচ মাত্র ৫০০ টাকা।

দিগন্তিকার আবিষ্কার করা এই নতুন ডিভাইসটির নাম হলো ‘টেকনোলজি উইথ ইমোশন বেসড অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ফর ভেহিক্যালস’। এই ডিভাইসের আরও কতকগুলি গুণাগুণ রয়েছে। যেমন, এই ডিভাইসের ব্যবহারে গাড়ির বা বাইকের বায়ুদূষণও কম হবে।

বর্ধমানের মেমারির রসিকলাল বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর সে এখন মেমারির ভি.এম. ইনস্টিটিউশন (ইউনিট ২)-এর একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাবা সুদীপ্ত বসু ও মা শুভ্রা বসু। বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ এবং নতুন কোন কিছু করার ইচ্ছা তার মধ্যে প্রথম প্রকাশ পায় তৃতীয় শ্রেণিতে। যখন সে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার জন্য এক মডেল তৈরি করে বড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। সে “২০১৭ এপিজে আবদুল কালাম ইগনাইট” পুরস্কার জিতেছিল তার উদ্ভাবনী শক্তিকে এবং বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে। ২০১৮ ‘এপিজে আবদুল কালাম ইগনাইট’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে সে।

এর আগেও তার রয়েছে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে সে একটি এমন চশমা আবিষ্কার করেছিল, যার সাহায্যে চারপাশের ৩১৫ ডিগ্রী দেখা যায় ঘাড়ের বা মস্তিষ্কের কোনরকম নড়াচড়া ছাড়াই। এছাড়াও রয়েছে সহজে গাছে ওঠার জন্য উদ্ভাবন করেছিল এক নতুন ধরনের জুতোর যার সাহায্যে বাঘ বা অন্য কোন হিংস্র পশুর আক্রমণ হলে সহজেই গাছে বা উঁচু স্থানে উঠতে পারবে মানুষ।

ড্রিল করার সময় মেশিন ঘূর্ণনের ফলে যে ধুলোবালি নির্গত হয় তার ফলে শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুস জনিত রোগের সৃষ্টি হতে পারে আর। তাই এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী অবন্তিকা বানিয়ে ফেলেছে ডাস্ট কালেক্টর যা ডাস্ট কালেক্টর অ্যাটাচমেন্ট ফর ড্রিল মেশিন নামের এক প্রকল্পভিত্তিক কাজ করার সময় সে বানিয়েছিল। যা ড্রিল করা মেশিনের সঙ্গে লাগানো যেতে পারে, আর তা লাগানো থাকলে ড্রিল করার সময়ও সেই ধুলোবালি বাইরে আর উড়বে না, তা ডাস্ট কালেক্টরে গিয়ে জমা হবে। মাত্র ২৫০ টাকা খরচ করে ড্রিল মেশিনের সঙ্গে এই অ্যাটাচমেন্ট লাগানো যায় সহজেই। এছাড়াও অস্থি জনিত সমস্যা থেকে তৈরি হওয়া রোগ স্পন্ডেলাইসিস সংক্রান্ত এক স্মার্ট বেল্ট ‘স্মার্ট সার্ভিকেল কলার বেলট’ তারই আবিষ্কার।