সেনাবাহিনীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে চলছে প্রতারণা, সতর্ক করলো সাইবার সেল

নিজস্ব প্রতিবেদন : দেশের জন্য যে মানুষগুলি দিনের পর দিন প্রাণ দিয়ে চলেছেন, যারা নিজেদের পরিবার-পরিজনদের থেকে দূরে সরে সর্বদা দেশকে সুরক্ষা দিচ্ছেন, তাদের প্রতি অর্থাৎ ভারতীয় সেনাবাহিনীদের প্রতি ভারতীয়দের শ্রদ্ধা ও আবেগ চিরদিনের। আর এই আবেগকে কাজে লাগিয়েই এবার প্রতারণা শুরু করেছে প্রতারকরা। প্রতারকরা এখন নিজেদের সেনাবাহিনীর জওয়ান হিসাবে পরিচয় দিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে নিচ্ছেন অতি সহজেই এবং তারা সেনাবাহিনীর আবেগকে হাতিয়ার প্রতারণামূলক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। কিন্তু কিভাবে সেনাবাহিনীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছেন প্রতারকরা?

পুরাতন জিনিসপত্র বিক্রির অনলাইন যে সমস্ত মাধ্যম রয়েছে সেই সমস্ত মাধ্যমে সেনাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে প্রতারকরা বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। তারা জলের দামে বিলাসবহুল গাড়ি, বাইক, স্মার্টফোন বিক্রির এমন বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন যা থেকে সাধারণ মানুষের চোখ ফেরানো সত্যিই মুশকিল। এরপর কোন ব্যক্তি বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করলে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনের জন্য জলপাই রঙের উর্দি পরা জাওয়ানের ছবি সহ যাবতীয় নথিপত্র ক্রেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রতারকরা। আদতে এই নথিপত্র সমস্তটাই জালিয়াতি করে তৈরি করা, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে যা খুবই সহজ।

নিজেদের একজন জওয়ান হিসাবে পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি ক্রেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠানো হচ্ছে মালের ডেলিভারি বিল। আর বলা হচ্ছে ডেলিভারির জন্য আগাম অর্থ অনলাইনে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। ডেলিভারির অর্থ বা টাকা মোটা অঙ্কের না হওয়াই ক্রেতারাও এতটা সাত-পাঁচ না ভেবে সেই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কখনো কখনো আবার ডেলিভারির বিলের টাকা পাঠানোর পরেও অন্য কোন অজুহাত দেখিয়ে সেই ক্রেতাকেই বলা হচ্ছে আরও কিছু টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার। আর এই ভাবেই চলছে প্রতারণা চক্র। ডেলিভারি টাকা অথবা প্রতারকদের থেকে দাবি করা অন্য অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে সেই মাল ক্রেতার বাড়িতে আর পৌঁছাচ্ছে না।

ইতিমধ্যেই এমন প্রতারণার জাল ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে এমন প্রতারণা বেড়েছে লকডাউন চলাকালীন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাম করে ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার প্রতারকরা। পুলিশের তরফ থেকে তদন্ত করে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল করা হয়েছে এমন প্রতারণা মূলক কাজকর্ম চালানোর জন্য। আর নতুন করে যাতে সাধারণ মানুষ এমন প্রতারণার সম্মুখীন না হন তার জন্য ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে সাইবার সেলের তরফ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার সাইবার সেলের তরফ করা হয়েছে সতর্ক। পাশাপাশি এমন একাধিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে সূত্র মারফত।

মূলত এর আগে আমরা দেখেছি এটিএম জালিয়াতির মতো ঘটনা, এটিএম অথবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে জালিয়াতির মতো ঘটনা, কিন্তু বর্তমানে প্রতারকরা যে পদ্ধতি বেছে নিয়েছে তাতে সাধারণ মানুষকে উল্লু বানানো খুবই সহজ। সেনাবাহিনীর নাম করে এমন প্রতারণার জাল প্রতারকরা বিভিন্ন পুরাতন জিনিস বিক্রির অনলাইন মাধ্যমগুলি ছাড়াও ছড়িয়ে দিয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেখানেও তারা এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করেছে। আর দেখা গেছে ওই সকল বিজ্ঞাপনের সাথে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করলেই সরাসরি কথা শুরু হচ্ছে প্রতারকদের। তারপর নানান অজুহাত দেখিয়ে এবং সেনাবাহিনীর পরিচয় দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জনের পর এমন প্রতারণা মূলক কাজ চালাচ্ছে তারা।

ক্রেতার বিশ্বাস অর্জনের জন্য ঐসকল প্রতারকরা নিমেষের মধ্যে ক্রেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের মত নথির ছবি। পাশাপাশি ডেলিভারি বিল মেটানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর। কোন কোন ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ফোন পে, গুগোল পে অথবা এমন ধরনের ইউপিআই আইডি। আর একসাথে এত নথি হাতে পেয়ে অবিশ্বাসের জায়গাটাই ভেবে উঠতে পারছেন না ক্রেতারা। ভেবে উঠতে পারছেন না যে এগুলি সব জাল হতেই পারে।

এখানেই শেষ নয়, ক্রেতার বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রতারকরা ক্রেতার পছন্দের জিনিসটি প্যাকিং করার ছবি এবং ইন্ডিয়ান আর্মি ট্রান্সপোর্ট পার্সেল নামে একটি হোম ডেলিভারির বিলের ছবিও দিচ্ছে ক্রেতার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। আর তারপরেই ক্রেতা ওই প্রতারকের ফাঁদে পা দিচ্ছেন এবং সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। যিনি ওই জিনিসপত্রের ডেলিভারির জন্য আগাম বিলের টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন তিনি বিশ্বাস করছেন তার কেনা জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে অপর প্রান্তের ব্যক্তি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই জিনিসপত্র আর আসছেন না।