বন্ধ হয়ে যাচ্ছে LIC! বাজারে ছড়ছে গুজব, কি বলছেন এলআইসি কর্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদন : দিন কয়েক ধরেই বাজারে সাধারণ মানুষদের মধ্যে ছড়িয়েছে জীবন বীমা সংস্থা এলআইসি সংক্রান্ত একটি খবর। আর যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত এলআইসি জীবন বীমা সংস্থার পলিসি হোল্ডার থেকে শুরু করে এজেন্টরা। এলআইসি নিয়ে এই খবরে এত আতঙ্ক কিসের! আসলে খবরটি হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এলআইসি নাকি কোটি কোটি টাকা লোকসানে চলছে, আর এলআইসি তাদের সমস্যা বেশি দিন টেনে নিয়ে যেতে পারবে না, এমনকি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারবে না।

তবে এই খবরের সত্যতা কতটা। রটে যাওয়া এই খবর আদৌ কতটা সত্য, বা কতটা মিথ্যা। যার প্রসঙ্গে অনুসন্ধান করতে আমরা সরাসরি যোগাযোগ করেছিলাম এলাইসির সিউড়ি শাখার ডেভেলপমেন্ট অফিসার চন্দন রুদ্রর সাথে। তিনি এই খবর সংক্রান্ত সমস্ত সত্য মিথ্যা আমাদের সামনে তুলে ধরেন।

তাঁর কথা অনুযায়ী, “ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত গুজব, অপপ্রচার ও কুৎসা রটাচ্ছে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম (Life Insurance Corporation of India) নাকি লোকসানে চলছে, ৫৭০০০ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে, ফলে পলিসি হোল্ডারদের টাকা ফেরত দিতে পারবে না। এই অপপ্রচারে জনসাধারণ কিছুটা বিভ্রান্তও হচ্ছেন।”

এরপর তিনি বলেন, “প্রথমেই বলে রাখি এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ভারতীয় জীবনবীমা নিগম এদেশের নিরাপদতম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।”

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশকিছু তথ্য দিয়ে তিনি বিষয়টি করেন। বলেন, “১৯৯১ সালে ভারতীয় বাজার খুলে যায় বিশ্বের কাছে। বিভিন্ন সেক্টরে নানা প্রাইভেট কোম্পানি আসে। ইনস্যুরেন্স মার্কেট খোলে ২০০০ সালে। বর্তমানে জীবন বীমা ক্ষেত্রে সরকারী এলআইসি ছাড়াও আরও ২৩টি প্রাইভেট কোম্পানি কাজ করছে। সময়ের সাথে সাথে, মূলত সরকারের ভুল আর্থিক নীতির জন্য, সরকারী সংস্থাগুলো প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে গেছে। সরকারী ব্যাঙ্ক, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ব্যতিক্রম ভারতীয় জীবন বীমা নিগম। ভারতীয় জীবন বীমা নিগম শুধু এদেশের নয় পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় (পলিসি সংখ্যায়) জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান। ৩১ শে মার্চ ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী আমাদের চালু পলিসির সংখ্যা ২৯.০৯ কোটি, মোট সম্পত্তি ৩১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। পলিসি ও প্রিমিয়ামে আমাদের মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ৭৪.৭১শতাংশ এবং প্রিমিয়ামে ৬৬.২৪ শতাংশ। ভারতীয় অর্থনীতি যখন খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখনও এই অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আমাদের প্রিমিয়াম ইনকাম গ্রোথ অবিশ্বাস্য ৪৬.৫২ শতাংশ।”

তিনি আরও জানান, “শুধু তাই নয়, প্রিমিয়াম ইনকামের মার্কেট শেয়ার গতবারের থেকে ৭% বেড়ে ৭৩.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ২৩ টি প্রাইভেট কোম্পানির সম্মিলিত মার্কেট শেয়ার মাত্র ২৬.৯৪ শতাংশ।”

রটে যাওয়া ভুয়ো খবরের বিপক্ষে তিনি দাবি করেন, “আগেই বলেছি ৫৭০০০ কোটি টাকার ক্ষতির যে অপপ্রচার বাজারে চলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুতর্কের খাতিরে সেটাকে সত্যি বলেও যদি ধরা হয় তাহলে দেখবেন তা এলআইসি’র মোট সম্পত্তির ২ শতাংশেরও কম। শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সমস্ত পাওনা মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৭০০০ কোটি নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে সেটাও গতবারের উদ্বৃত্ত অর্থের মাত্র ১৬ শতাংশ।”

তাঁর দাবি, “ভারতীয় জীবনবীমা নিগম একটি জনকল্যাণকামী সংস্থা, তাই সাধারণ মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে এই সংস্থার অধিকাংশ অর্থ মূলত দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়, যার পরিমাণ ইতিমধ্যে ২২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা কিছু টাকা শেয়ার মার্কেটেও ইনভেস্ট করি। শেয়ার মার্কেট সর্বদা পরিবর্তনশীল হওয়ায় আপনার আমানতও পরিবর্তিত হয়। একটা সহজ উদাহরণ নেওয়া যাক। ধরা যাক, আপনি ২ বছর আগে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ৩ মাস আগে আপনার ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছিল ১৩০ টাকা। বর্তমানে সেটা কমে হয়েছে ১২০ টাকা। এখন প্রশ্ন হল, আপনি উপরের উদাহরণ থেকে কি বলবেন যে আপনার ১০ টাকার ক্ষতি হয়েছে? নিশ্চয় নয়। আপনি বরং বলতে পারেন আপাতত ভাবে আপনার লাভ ৩০ টাকা থেকে কমে ২০ টাকা হয়েছে। আপনি তো শেয়ারটা বিক্রি করেননি তাহলে লাভ-ক্ষতির হিসেব কোথা থেকে আসবে? শেয়ার মার্কেট চাঙ্গা হলে আবার ওই ২০ টাকার লাভটা বেড়ে আবার ৪০ টাকা হতে পারে। ৫৭০০০ কোটি টাকা ক্ষতির অপপ্রচারটাও ঠিক এমনই। ভারতীয় জীবন বীমা নিগম বিগত চার বছরে শেয়ার মার্কেট থেকে যথাক্রমে ১১০০০ কোটি টাকা, ১৯০০০ কোটি টাকা, ২৫০০০ কোটি টাকা ও ২১০০০ কোটি টাকা লাভ করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যিটা জানুন,মিথ্যাকে পরিত্যাগ করুন।”