গান স্যালুট আর চোখের জলে বিদায় শহীদ রাজেশকে, ফুঁসছে পরিবার-দেশ

হিমাদ্রি মণ্ডল : মঙ্গলবার বিকাল বেলায় হঠাৎ সেনা অফিস থেকে ফোন আসে। বলা হয়, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীন সীমান্তে দুই দেশের সেনাদের সংঘাতে আহত হয়ে রাজেশ ওরাং ভর্তি রয়েছেন লে লাদাখের আর্মি হাসপাতালে। কিছুক্ষণ পরেই আরও একটি ফোন আসে আর জানানো হয়, রাজেশ ওরাং আর নেই তিনি শহীদ হয়েছেন। এই খবর পেতেই ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। অসুস্থ বাবা সুভাষ ওরাং আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন, ছেলেকে হারানোর কথা মনে করতেই বারবার জ্ঞান হারাতে শুরু করেন মা মমতা ওরাং। তবে শোকের মাঝেও গোটা পরিবার ফুঁসছে, পরিবারের পাশাপাশি গোটা দেশ ‘বদলা’ খুঁজছে।

বুধবার সকাল থেকেই শহীদ রাজেশের বাড়ির সামনে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। একের পর এক হাজির রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা, মন্ত্রীরা। দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া রাজেশের মা-বাবা ‘কোলের এক সন্তান হারালেও হাজার হাজার সন্তান এই মা-বাবার পাশে রয়েছে।’ বুধবার সন্ধ্যায় শহীদ রাজেশ ওরাংয়ের কফিনবন্দি দেহ গ্রামে ফেরার কথা শোনা গেলেও তা সম্ভব হয়নি। ঠিক একইভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের ভিড় শহীদ জাওয়ানার বাড়িতে। বৃহস্পতিবারও তার কফিনবন্দি দেহ ফেরার কথা থাকলেও কোনো কারণবশত তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ শহীদ রাজেশের কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছায় গ্রামে।

শহীদ বীর সেনা রাজেশ ওরাংয়ের দেহ গ্রামে পৌঁছাতেই হাজার হাজার মানুষ ‘রাজেশ ওরাং অমর রহে’ ধ্বনিতে মুখরিত হন। কেউবা জাতীয় পতাকা হাতে দুদিন ধরেই অপেক্ষারত ছিলেন, কেউ আবার ফুল হাতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শহীদের দেহ গ্রামে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার, কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। তবে তারা এমন ঘটনার বদলা খুঁজছেন। আর এই হাজার হাজার মানুষের সমবেত চিৎকার আজ চীনকে হুঙ্কার দিচ্ছে বীরভূম থেকেই, হুঙ্কার যাচ্ছে বাংলা থেকে, ভারত থেকে।

শহীদ রাজেশকে গান স্যালুট ও চোখের জলে শেষ বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুতি আগেই সাড়া ছিল। প্রস্তুতিতে বৃহস্পতিবার বিপুল বাঁধার সৃষ্টি মুষলধারে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। ঠিক যেন মেঘ ভেঙ্গে ঝরছে অশ্রু। তবে সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে শহীদ সেনাকে শেষ বিদায় জানানোর প্রস্তুতি সেরে ফেলে বীরভূমবাসীরা। এরপর গান স্যালুট ও চোখের জলে বিদায় জানানো হয় বীরভূমের ভূমিপুত্র শহীদকে। শহীদ রাজেশ ওরাংয়ের শেষকৃত্য আজই সম্পন্ন হবে নিজের গ্রামেই। ঘরের ছেলেকে সমাধিস্থ করতে নিজে হাতেই মাটি খুঁড়ে সমাধি তৈরি করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাতের সেই ভারত ও চীন সেনাদের সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহীদ হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। আর এই ২০ জন শহীদ সেনাদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুইজন। একজন হলেন বীরভূমের শহীদ রাজেশ ওরাং ও অন্যজন আলিপুরদুয়ারের শহীদ বিপুল রায়। তবে সেই রাতে ভারতীয় সেনারা কেবলমাত্র প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তা নয়, চীনা সেনাদের যোগ্য জবাব দিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এই সংঘাতে চীনা সেনাদের কমকরে ৫০ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাই আমাদের ভারতীয় সেনারা আমাদের গর্ব, যারা শুধু মরে না, মরার আগে মারে। জয় হিন্দ।