লাল্টু : নতুন বছরের প্রথম দিনে আপামর বাঙালিরা মাতেন বনভোজনে। ঠিক তেমনি গোপাল, বনমালী ও শ্রীকৃষ্ণও যান বনভোজনে। এছাড়াও এদিন বনভোজনে যান জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রা। এই রীতি দীর্ঘ ১৫০ বছরের পুরাতন।
দেড়শ বছর আগে বীরভূমের হেতমপুরে শ্রী গৌরাঙ্গ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেতমপুরের মহারাজ শ্রীরামরঞ্জন চক্রবর্তী। প্রাচীনকালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বনভোজনের এই রীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে বর্তমানে তা আরও হয়েছে জাঁকজমক, যোগ হয়েছে গৌড়ীয় রীতিনীতি। আর সেই প্রাচীন সেই রীতি মেনেই ইংরেজি বছরের প্রথম দিন মন্দিরের পাশের জঙ্গলে ভগবানকে নিয়ে ভক্তদের হয় বনভোজন। দিন একেবারেই নির্দিষ্টভাবে ধার্য, তবে কোন কোন বছর একাদশী পরে গেলে দিনের পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রে বনভোজন হয় ২রা জানুয়ারি।
বছরের প্রথম দিনে বনভোজনের ক্ষেত্রে আরও এক প্রাসঙ্গিকতার কথা শোনা যায় গৌড়ীয় মঠ কর্তৃপক্ষের মুখ থেকে। জানা যায় এই দিনেই ২০০৭ সালে হেতমপুরের মহারাজা মাধবী রঞ্জন চক্রবর্তী তাদের হাতে মন্দিরের ও দেবতাদের সেবার দায়িত্ব তুলে দেন। সে কারণেও এই দিনটাকে একটু আলাদা ভাবে উপভোগ করা হয়।
বনভোজনে মূল চার রকম পদ থাকলেও ভক্তদের দেওয়া নানান পদে পদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে, তা দাঁড়ায় প্রায় ৫৫ – ৬০ ধরনের। মূল চার রকম পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাদা অন্ন, পুষ্পান্ন, খিচুড়ি অন্ন, পরমান্ন। এছাড়াও থাকে মিষ্টি, মিষ্টান্ন। একেবারেই রাজকীয় ভাবে এদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, গোপাল ও বনমালী, এছাড়াও জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রাকে নিয়ে ভক্তদের বনভোজনের রীতি বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে হেতমপুরের এই গৌরাঙ্গ মঠে। ব্যান্ড, হরিনাম, সংকীর্তনের মধ্য দিয়ে জাঁকজমকভাবে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গলে, আর বনভোজন হয়ে গেলেই একইভাবে আবার ফিরিয়ে আনা হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।