অন্তঃসত্ত্বা হলেও দমে যাননি, দেশে প্রথম Covid-19 টেস্ট-কিট বানিয়ে নজির মিনালের

নিজস্ব প্রতিবেদন : নারী যে শক্তিময়ী একথা আবারও প্রমান করলেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও বিশ্রাম নেওয়ার বদলে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। খেটে যাচ্ছেন দিন রাত। খাটছেন গোটা দেশের জন্য। খাটছেন এই মানব সভ্যতার জন্য। যেখানে অতিশিক্ষিত কিছু মানুষের মুর্খতার জন্য এদেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সেই একই সময়ে দাঁড়িয়ে একজন নারী গর্ভবতী অবস্থাতেও কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি ডাক্তারের দেওয়া ডেলিভারির ডেটও পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কোভিড ১৯ টেস্ট কিট বানাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। পুণের মাইল্যাব মলিউকিউলার ডায়াগনস্টিক কোম্পানির চিফ ভাইরোলজিস্ট তিনি। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত টেস্ট কিটেই এতদিন কাজ চলছিলো ভারতের। এই প্রথম ভারতে তৈরি হলো টেস্ট কিট। কোভিড-১৯ টেস্ট-কিট বানান ইনি। নাম মিনাল দাখাভে। এই টেস্ট-কিট এখন দেশের সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলিতে চলে এসেছে। এই টেস্ট-কিটকেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে ICMR ও পুনের NIV।

পুণে NIV বলেছে যে, করোনা যুদ্ধের মোকাবিলা করতে ভারত ও খুব একটা পিছিয়ে নেই। এই করোনা সংক্রমণ যাতে সহজে ধরা যায় সেইজন্য নানারকম টেস্ট-কিট নিয়ে পরীক্ষা চলছে।

RT-PCR বলেছে, এত ব্যয়বহুল টেস্ট-কিটের বদলে স্ক্রিনিং-কিট অথবা অ্যান্টিবডি টেস্ট-কিট বানানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ভাইরোলজিস্টরা। সেইমতো কাজও শুরু হয়ে গেছে দেশের ল্যাবগুলিতে। পুণের মাইল্যাব ডায়াগনস্টিক সংস্থার এই মহিলাই এবার যা করলেন তার সত্যি প্রশংসনীয়। বৃহস্পতিবার থেকেই এই টেস্ট-কিট চলে এসেছে বাজারে। আপনাদের জানিয়ে রাখি একটা টেস্ট-কিটে অন্তত ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়।

পুণের মাইল্যাব বায়োমেডিক্যাল কোম্পানির মাইল্যাবের রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ড. মিনাল দাখাভে ভোঁসলের এই অবদান সত্যি মনে রাখার মতো। ইনার কথায়, “করোনার সংক্রমণ তখন একটু একটু করে ধরা পড়ছে দেশে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। সেই সময় প্রসবকালীন নানা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দেশকে বাঁচাতে হবে, এই চিন্তাই সবচেয়ে আগে ছিল।”

ভারতের জন্য এটি আরও একটি বড় খবর যে বিদেশ থেকে আমদানি করা টেস্ট-কিটগুলিতে যেখানে সংক্রমণ ধরতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে ড. মিনাল জানিয়েছেন যে, এই টেস্ট-কিট কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরে দেবে মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই।

কতটা সময় লেগেছিলো এই টেস্ট কিট বানাতে?

মিনাল ভোঁসলের কথায়, “মাত্র ৬ সপ্তাহ সময় লেগেছে এই টেস্ট-কিট বানাতে। ১৮ই মার্চ পুণে NIV, ভারতের FDA ও ড্রাগ কন্ট্রোলের CDSCO হাতে এই টেস্ট-কিটের যাবতীয় তথ্য জমা করে দিয়েছিলাম।”

১৮ মার্চই তার ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের স্বার্থে তিনি সময় পিছিয়ে দেন। সকালের মধ্যে সব কাজ শেষ করে সন্ধের সময় তার ডেলিভারি হয়। একটি শিশুকন্যার জন্ম দিয়েছেন তিনি। মুম্বই, পুণে, দিল্লি, গোয়া, বেঙ্গালুরুর সবজায়গায় পৌঁছে গেছে তার তৈরি করা এই টেস্ট কিট।

কতগুলি টেস্ট কিট তৈরি করা হয়েছে?

এখন ১৫০টি টেস্ট-কিট তৈরি করা হয়েছে। এই টেস্ট কিটের দ্বারা পরীক্ষাতে খরচ পড়বে ১২০০ টাকার কাছাকাছি ICMR এর নির্ধারণ করা দাম (৪,৫০০)র থেকেও কম।

ওই সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে এরকম এক লক্ষ টেস্ট-কিট বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজন হলে তারা দু’লক্ষ টেস্ট-কিট সরবরাহ করতে পারবে। পুণে মাইল্যাবের ডিরেক্টর ড. ওয়াংখেড়ের কথা অনুযায়ী, দেশের আরও ১১৮টি ল্যাবে এই টেস্ট-কিট বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।

দেশের সবকটা কোয়ারেন্টাইন থাকা বহু মানুষের মধ্যে কারা সংক্রামিত কারা সংক্রামিত না তা দ্রুত জানা যাবে এই টেস্টের মাধ্যমেই। আমরা এরকম একটি সফল টেস্ট কিট বানানোর জন্য মিনাল দেবীকে অভিনন্দন জানাই।মাইল্যাবকেও জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। দূরত্বে থাকুন – ভালো থাকুন – সুস্থ থাকুন।