নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতের যে জেলায় প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সেই জেলা বর্তমানে করোনাকে একপ্রকার ঠেকিয়ে দিয়েছে। ম্যাজিকের মতো কাজ করছে এখানকার জেলা প্রশাসন, এখানকার মডেল। সেই জেলা ভারতের কেরলের এক অংশ। যে কারণে কেরলে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের গতি নেই। এখানেই মৃতের সংখ্যা মাত্র ২। ঠিক তেমনি দেশের ১৫ রাজ্যের এমন ২৫ টি জেলা রয়েছে যারা এমন ম্যাজিক করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের গতি বাড়লেও এখনও পর্যন্ত এখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি বলেই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যুগ্ম-সচিব লব আগারওয়াল। তিনি আরও জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় এক কদম এগিয়ে রয়েছে ভারত। ঠিক তেমনই সোমবার ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়, দেশের ১৫ টি রাজ্যের ২৫ টি জেলার করোনা সংক্রমণের হার কমতির দিকে। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে জানানো হয়, গত দুই সপ্তাহে এই সকল জেলায় করোনা সংক্রামিত সংখ্যা একটিও বাড়েনি। মোটের উপর এই ২৫ জেলায় আপাতত ঠেকানো গিয়েছে করোনা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে দেওয়া তালিকায় এই ২৫ টি জেলার নাম জানা গিয়েছে
- কেরল : ওয়ানাড়, কোট্টায়াম।
- মহারাষ্ট্র : গোন্ডিয়া, রাজনন্দ গাঁও, দুর্গ।
- ছত্তীসগড় : বিলাসপুর।
- কর্নাটক : দাভানগিরি, কোডাগু, টুমকুরু।
- গোয়া : দক্ষিণ গোয়া।
- মণিপুর : পশ্চিম ইমফল।
- জম্মু-কাশ্মীর : রাজৌরি।
- মিজোরাম : আইজল (পশ্চিম)।
- পুদুচেরী : মাহে।
- পাঞ্জাব : এসবিএস নগর।
- বিহার : পটনা, নালন্দা, মুঙ্গের।
- রাজস্থান : প্রতাপগড়।
- হরিয়ানা : পানিপত, রোহটাক, সিরসা।
- উত্তরাখণ্ড : পাউরি গাড়য়াল।
- তেলঙ্গানা : ভদ্রদারি কোথাগুডেম।
তবে এই সকল জেলায় সংক্রমণ আপাতত থেকে দেওয়া সম্ভব হলেও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যাতে করে পুনরায় আবার যেন সংক্রমণ ফিরে না আসে। এই সকল প্রতিটি জেলাতেই একসময় হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ে বিপুল পরিমাণে। তারপরেই বেশকিছু পদক্ষেপের ভিত্তিতে তা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়। কি ছিল সেই সকল পদক্ষেপ?
১) এসকল জেলাগুলির মানুষের সচেতনতা ছিল প্রশংসনীয়। লকডাউনবিধি কঠোরভাবে মেনে চলেছেন এখানকার বাসিন্দারা। ভিড়, জমায়েত ইত্যাদি এড়িয়ে চলেছেন। প্রশাসনিক তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে লকডাউন ঘোষণা হোক অথবা তার আগেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সিল করে দেওয়া হয়। বহিরাগতদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় জেলার সীমান্ত।
২) কেন্দ্রের গাইডলাইন মেনে ‘কন্টেনমেন্ট প্ল্যান’ ঠিক করে নেয় এই সকল জেলাগুলি। এই ‘কন্টেনমেন্ট প্ল্যান’ সংক্রমণকে রুখে দিতে সাহায্য করে।
৪) কন্টেনমেন্ট প্ল্যানের মাধ্যমে সংক্রামিত এলাকাগুলিতে ক্লাস্টার জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। নির্দিষ্ট এলাকা অথবা গণ্ডির মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দিলে সেই এলাকাকে ক্লাস্টার জোন বলা হয়। তারপর সেখানে দ্রুত স্ক্রিনিং ও টেস্টিং শুরু করে সংক্রামিত ব্যক্তিদের আলাদা করে আইসোলেশন রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। তাদের সংস্পর্শে আসার ব্যক্তিদের পাঠানো হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। যেখানে তাদেরও চলে টেস্ট।
৪) এছাড়াও এই জেলাগুলিতে র্যাপিড ও র্যান্ডম টেস্টের বন্দোবস্ত করা হয়। সামান্য উপসর্গ দেখলেই টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসা। সঠিকভাবে স্ক্রীনিং, নমুনা সংগ্রহ ও সঠিক সার্ভের মাধ্যমে সফলতা এসেছে এই সকল জেলায়।