লাল্টু : দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী উৎপল সূত্রধর সপ্তম শ্রেণী থেকেই ঠাকুর তৈরি করে আসছেন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৪৫ বছর। বছরের পর বছর ধরে তিনি মরশুম অনুযায়ী নানান রকমের প্রতিমা তৈরি করেন। তবে দুর্গা প্রতিমার উপরই মূলত তার এবং তাদের মত মৃৎশিল্পীদের সারা বছর সংসার খরচের যোগান হয়।
আর দুর্গা প্রতিমা নির্মাণে এই শিল্পীর বেশ খ্যাতিও রয়েছে। যে ক্লাব যেমন অর্ডার দেয় তেমনই প্রতিমা বানিয়ে দেন তিনি। তার হাতে গড়া প্রতিমা বীরভূম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যায়। রথের পর থেকেই তার ব্যস্ততা থাকে চরমে। আর এই সময় তার কারখানায় ঢোকা দুঃসাধ্য হয়ে পরে। কারণ একদিকে বিশ্বকর্মা, অন্যদিকে কমকরে পনেরোটা দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন মৃৎশিল্পী। খাওয়াদাওয়ার সময় ভুলে দিনরাত এক করে কাজ করেন। এই মৃৎশিল্পীর কাছে ১০ থেকে ১২ জন কাজ করেন। তারাও এই সময়ে কিছু উপার্জন করে থাকেন।
কিন্তু চলতি বছর করোনার প্রকোপে মানুষের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। করােনা পরিস্থিতিতে ভারত তথা বিশ্বের বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বেকারত্বের জীবন কাটাচ্ছেন, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব। সেই চিত্র ধরা পরল হেতমপুরের মৃৎশিল্পী উৎপল সূত্রধরের কারখানায় গিয়ে।
যেখানে এই মৃৎশিল্পী অন্যান্য বছর এই সময়ে বিশ্বকর্মা ও দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে মাটি, রং ও তুলি নিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকেন, সেই জায়গায় এই বছর একটিও প্রতিমার বায়না নেই।
মৃৎশিল্পী উৎপল সূত্রধর জানিয়েছেন, “এই বছর এখনো পর্যন্ত একটাও বিশ্বকর্মা ও দুর্গা প্রতিমার বায়না পাইনি। সংসার চালানো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।” পাশাপাশি তার সঙ্গে যে আরও ১০-১২ জন কাজ করেন তাদেরইবা সংসার চলবে কি করে সেই চিন্তায় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
আর বর্তমানে একটিও প্রতিমার বায়না না পেয়ে এই মৃৎশিল্পী অবশেষে নিজের সংসারের হাল ধরতে মাটি, রং ও তুলি ছেড়ে রাজমিস্ত্রির যন্ত্রপাতি হাতে তুলে সিমেন্টের মূর্তি বানাচ্ছেন। তিনি জানান, “এই অবস্থায় কোন আয় না থাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার নিতে হচ্ছে। সরকার যদি কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে খুব ভালো হয়। আর এইভাবে কোনদিন রাজমিস্ত্রির যন্ত্রপাতি নিয়ে সিমেন্টের কাজ করতে হবে সেটা আগে কখনো ভেবে উঠতে পারিনি।”