হিমাদ্রি মন্ডল : যিশুখ্রিস্টের জন্ম দিবস ২৫ শে ডিসেম্বর অর্থাৎ বড়দিন, যেদিন সমগ্র বিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষেরা দিনটিকে সাড়ম্বরে পালন করেন। বিশ্বের পাশাপাশি বীরভূম জেলার বিভিন্ন গির্জাগুলির সাথে সাথে সেজে উঠেছে সিউড়ির অন্যতম প্রাচীন গির্জা, যাকে সাধারণত সকলেই লাল গির্জা বলেই চেনেন। সকাল থেকেই খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত মানুষেরা এই লাল গির্জায় এসে তাদের ভিড় জমিয়েছেন। শুধু আজ থেকেই নয় গতকাল সন্ধ্যা থেকেই এখানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে গেছে।
যীশুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে খ্রিস্ট ধর্মের মানুষেরা গির্জায় এসে প্রার্থনা করছেন, যীশুর উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তা নিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করে দিনটি পালন করছেন। কিন্তু এখানেই লক্ষণীয় সিউড়ির লাল গির্জায় নেই ক্রুসের সাথে যীশুর কোনো মূর্তি, রয়েছে শুধু ক্রুস, যাতে বিদ্ধ হয়েছিলেন যীশু। কিন্তু কেন? তবে প্রভু যীশুর ছবি বা মূর্তি থাকে চার্জ প্রাঙ্গণে যীশুর জন্মদিন পালনের জন্য।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলে গিয়েছিলেন, ‘যত মত, তত পথ’। এখানে যেন তারই প্রতিফলন। আসলে এর পিছনে রয়েছে ইতিহাস। গির্জা কর্তৃপক্ষের সাথে এবিষয়ে কথা জানা গিয়েছে, সিউড়ির পশ্চিম লালকুঠি পাড়ায় অবস্থিত নর্দান ইভানজেলিক্যাল লুথারেন চার্চ বা লাল গির্জা ইটালিয়ান স্থাপত্যের অনুকরণে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয়, এই চার্চের রঙ লাল। তাই এই গির্জাটি লাল গির্জা নামেই পরিচিত। এই গির্জাটি ৩৭ শতক জায়গার উপর তৈরি হয়েছিল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে। এই চার্চ অল সেন্টস্ চার্চ নামেও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের কাছে পরিচিত। আসলে লুথারেন চার্চে থাকে না প্রভু যীশুর কোন মূর্তি। তাই সিউড়ির এই নর্দান ইভানজেলিক্যাল লুথারেন চার্চে নেই প্রভু যীশুর কোন মূর্তি।
বছরের পর বছর ধরে এই চার্চ মাথা উঁচু করে রয়েছে সিউড়ি শহরে। তবে চার্চের মাথার উপরে থাকা বিশাল ঘন্টা ছাদ থেকে নামিয়ে গত ২০১৭ সালে গীর্জার প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে। বড়দিনের দিন প্রাচীন এই গীর্জাতে শুধু খ্রিস্টধর্মের মানুষেরাই নন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রচুর লোকের আগমন হয়। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান, ওয়ার্ড, গ্রান্ট প্রমুখ ব্যক্তিরা শ্রীরামপুরে মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।
শ্রীরামপুর মিশন ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বীরভূম জেলায় কাজ শুরু করে। ব্যপটিষ্ট মিশনের বীরভূমে প্রধান দপ্তর ছিল সিউড়ি। ১৮২৫ খ্রীঃ শ্রীরামপুর থেকে রেভারেন্ড জেমস উইলিয়ামশনকে সিউড়িতে পাঠান উইলিয়াম কেরি। রেভারেন্ড জেমস উইলিয়ামশন ছিলেন সিউড়ি জেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেন। তিনি ডাক্তারীর পাশাপাশি মিশনারির কাজ করতেন। তিনি সিউড়িতে একটি স্কুলও চালাতেন। তাঁর স্কুলের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে থাকেন মিশনারীরা। ১৮৬৫ খ্রীষ্টাব্দে ই. সি. জনসন সিউড়ি থেকে ১৪ মাইল দূরে বেলবুনিতে মিশনের প্রধান কেন্দ্রটি তৈরি করে কাজ চালাতে থাকেন।
১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দে রেভারেন্ড ক্যাম্প নারায়ণপুরে একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। জেরিমা ফিলিপস প্রথম মহিলা মিশনারি যিনি খ্রিস্টধর্ম প্রচারের কাজে সক্রিয় ছিলেন। মিশনারীরাই এই লাল গীর্জার প্রতিষ্ঠা করেন। আর আর. টি. গার্লস স্কুলের কাছে আরও একটি গীর্জা আছে। যেটিকে স্থানীয় খ্রিস্টানরা সাদা গীর্জা বা সাধারণ ভোজনালয় বলেন। বড়দিনের অনুষ্ঠান হয় লাল গির্জাতে। প্রতি বছর ২৪ শে ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় বিশেষ প্রার্থনা হয় এবং বড় দিনের দিন সকাল ৯ টায় প্রার্থনা হয়।