This Most Delicious Fish will beat Hilsa in taste: কথাতেই আছে মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় একটি খাদ্য। এর মধ্যে ইলিশ বাঙালির কাছে সব থেকে প্রিয়। ইলিশকে মাছের রাজা বলেই সম্বোধন করে থাকে বাঙালিরা। ঘটি ও বাঙালদের মধ্যে ইংলিশ আর চিংড়ি নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও, ইলিশ কিন্তু সবারই পছন্দের মাছ। বাঙালির মনে একচ্ছত্র আধিপত্য চলে আসছে এই রুপালি শষ্যর। তবে শুধু ইলিশ নয়, রয়েছে আরও এক রুপালী সুন্দরী বাঙালির কাছে এই মাছের কদর কিন্তু কম নয়। উত্তরের ইলিশ বলে সম্বোধন করা হয় বোরলী মাছকে। আকারে বা রুপে ইলিশ মাছের ধারে কাছে যেতে না পারলেও, স্বাদে গন্ধে কিন্তু ইনিশের থেকেও সেরা এই বোরোলি মাছ (Most Delicious Fish)।
উত্তরবঙ্গের এই রূপালী শস্যটি শুধুমাত্র স্থানীয়দের কাছে নয়, পর্যটকদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেকেই বোরোলিকে তিস্তার ইলিশ বলে সম্বোধন করেন। বোরোলি যদিও তোর্সা, রায়ডাক সহ উত্তরবঙ্গের প্রায় সমস্ত নদীতেই পাওয়া যায়। কিন্তু সব থেকে বেশি পাওয়া যায় তিস্তা নদীতে। আর তিস্তার বরোলি সবথেকে সেরা। অবশ্য স্বাদে গন্ধে তোর্সার বোরোলিও কিছু কম যায় না। কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পাতলা ঝোল হোক বা বরোলি মাছের সর্ষে পাতুরি সবকিছুই স্বাদে গন্ধে অপূর্ব। ১ বার খেলেই মুখে স্বাদ লেগে থাকবে সব সময়। আকার, আয়তনে খুবই ছোট এই মাছগুলি। খুব বড় সাইজের বরোলি মাছের সাইজ ৩ থেকে ৪ ইঞ্চির মধ্যেই থাকে। কিন্তু স্বাদে গন্ধে এই মাছ (Most Delicious Fish) অনায়াসে পিছনে ফেলে দিতে পারে ইলিশকেও। তবে ইলিশের মত বোরোলি কিন্তু সমুদ্রে হয় না, হয় নদীর পরিষ্কার জলে।
উত্তরবঙ্গের মৎস্যজীবীরা বলেন বোরোলি খুব সুখী মাছ। নদীর স্বচ্ছ প্রবাহিত জল ছাড়া বোরোলি মাছ বাঁচতে পারেনা। সামান্য নোংরা জমলেই সেখানে আর দেখা পাওয়া যায় না বোরোলি মাছের। বর্তমানে বোরোলী মাছের চাহিদা যত বাড়ছে, যোগান তত কমছে। অনেকেই মনে করেন চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মাছের যোগান হয়তো কমছে। কিন্তু মৎস্যজীবীদের মতে, মাছের যোগান কমার কারণ জলদূষণ। নদীর ধারে কৃষি কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক যুক্ত জল এসে পড়ে নদীতে। তার ফলেই দূষিত হয়ে যাচ্ছে নদীর জল। আর দূষিত জলে বোরোলি মাছ বেঁচে থাকতে পারে না। সাধারণত বর্ষার আগে এপ্রিল-মে মাসে এবং বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বোরোলি মাছের দেখা মেলে। যে সময় নদীর জল একটু কম থাকে। আগে এই সময় যথেষ্ট পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত বাজারে। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। জোগান না থাকার কারণে বোরোলি মাছের স্বাদ ও গন্ধ (Most Delicious Fish) এখন প্রায় স্মৃতি হয়ে যেতে বসেছে।
আরও পড়ুন ? Hilsa Farming in Pond: জলের দরে মিলবে ইলিশ, ধার ধারতে হবে না বাংলাদেশের! বড় বন্দোবস্ত রাজ্যে
বোরোলি মাছের বেড়ে উঠার জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, তা শুধু নদীর খরস্রোতা জলেই পাওয়া সম্ভব। তাই শুধুমাত্র খরস্রোতা নদীর জলেই দেখা মেলে বোরোলি মাছের। তিস্তা নদীর উপর ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকে স্রোত কমেছে। কমেছে বোরোলির পরিমাণও। সেই তুলনায় তোর্সাতেই এখন বোরোলি বেশি পাওয়া যায়। ইলিশ মাছের মত বোরোলিও স্রোতের বিরুদ্ধে নিজেকে ভাসিয়ে দিতেই অভ্যস্ত। সেই পথে বাঁধা পড়লেই বোরোলির দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। যদিও বর্তমানে ইলিশের মতো বোরোলির চাষ করারও চেষ্টা চলছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু ভোজন রসিকদের মতে এই চেষ্টা এক প্রকার বৃথা। বিকল্প পদ্ধতিতে চাষ করা বোরোলিকে বোরলির সমগোত্রীয় বলা যায়, কিন্তু বোরোলি বলা যায় না। আসল বোরোলির সাথে চাষ করা বোরোলির স্বাদের কোন তুলনাই হয় না। চাষ করা বোরোলি মাছ স্বাদের দিক থেকে যতই ভালো হোক না কেন, আসল বোরোলির কাছে স্বাদে গন্ধে (Most Delicious Fish) কোন পাত্তাই পাবে না তারা।
বহুকাল ধরে বোরোলি মাছের প্রশংসা চলে আসছে বিশিষ্টজনদের মুখে। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এমনিতে শুদ্ধ নিরামিষাসি হলেও তার মুখেও শোনা গেছে বোরলি মাছের প্রশংসা। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, উত্তরবঙ্গের কথা উঠলেই বোরলির কথা আগে মনে পড়ে। শুধু তিনি নয়, বোরোলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। রাষ্ট্রপতি ভবনের তৎকালীন পাচক তাঁকে এই মাছ রান্না করে খাইয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি এই মাছের বড় ভক্ত হয়ে ওঠেন। বোরোলি মাছের ভক্ত কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও। প্রতিবছর নিয়ম করে গ্যাংটক ঘুরতে যেতেন তিনি। সেখানে গেলেই কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে রান্না করা বোরোলি মাছের পাতলা ঝোল তার চাই-ই চাই। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও নাকি এই মাছ খুবই প্রিয়। পশ্চিমবঙ্গবাসী তথা সমগ্র ভোজন রসিক বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে সুস্বাদু মাছ হিসেবে পরিচিত বোরোলি (Most Delicious Fish)।