নিজস্ব প্রতিবেদন : দিন কয়েক আগে থেকেই মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা (Jiban Krishna Saha)। সম্প্রতি তিনি শিরোনামে উঠে এসেছেন তার বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। তবে সিবিআই হানা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি ট্রেন্ডিংয়ে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু এর আগেও বিভিন্ন সময় তাকে শিরোনামে আসতে দেখা গিয়েছে স্থানীয়দের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে।
জীবনকৃষ্ণ সাহা উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পত্তির অধিকারী। তবে তার বিপুল সম্পত্তি থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে তার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে তা সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় এবং নজরে আসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে নেমে জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে।
জীবনকৃষ্ণ সাহা মুর্শিদাবাদের বিধায়ক এবং বাসিন্দা হলেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন বীরভূমের সঙ্গে। মুর্শিদাবাদের একটি বিদ্যালয়ের থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে ইতিহাসের স্নাতক হন ১৯৯২ সালে। এরপর স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠন হয় বিশ্বভারতীতে।
জীবনকৃষ্ণ সাহার বাবার প্রচুর সম্পত্তি ছিল। বিঘার পর বিঘা জমি, তেল কল, একাধিক বাড়ি কিনা ছিল না তাদের। তবে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর জীবন কৃষ্ণ সাহার সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি ঘটে। যদিও তার মায়ের প্রতিপত্তি ১ ইঞ্চি কম ছিল না। তিন বিঘা জমির উপর বাড়ি এবং ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা ইত্যাদি সবকিছু ছিল জীবনকৃষ্ণর মায়ের নামে।
বিপুল সম্পত্তির মালিক জীবনকৃষ্ণ সাহা ছোট থেকেই দুহাতে টাকা উড়িয়েছেন। তবে দুহাতে টাকা ওড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে ছিল চাকরিজীবন থেকে। প্রথমে তিনি একটি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পান। কিন্তু সেই সময়ই তার নাম জড়ায় বেআইনি প্রতিবন্ধী কার্ড চক্রে। তখনই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।
বর্তমানে তিনি একটি স্কুলের শিক্ষক এবং বিধায়ক। তবে বিধায়ক হওয়ার পর থেকে তিনি আর স্কুলে যান না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বরাবর অসৎ উপায়ে টাকা রোজগার করার প্রতি ঝোঁক রয়েছে জীবন কৃষ্ণ সাহার। গত কয়েক বছর চাকরির জন্য কার্যত তার বাড়িতে লাইন দিতে দেখা গিয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিপুল সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছে বিধায়কের।
বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার নামে কান্দিতে একটি রাইস মিল রয়েছে। রয়েছে চার বিঘা জমি। এর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ জমির জন্য টাকা পেমেন্ট করে দিলেও সেই সকল জমির রেজিস্ট্রি হয়নি। কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে বিধায়কের একটি পুকুর এবং গ্যাস গোডাউন রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কৌশিক ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জীবনকৃষ্ণ সাহা এবং কৌশিক ঘোষের বাড়ির আশেপাশে অন্ততপক্ষে ৩৫ বিঘা জমি জীবনকৃষ্ণ সাহার রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ ছাড়াও বীরভূমের সাঁইথিয়া এলাকায় পাঁচ কাঠা জমি রয়েছে জীবন কৃষ্ণ সাহার। বোলপুরে চার কাঠা জমি রয়েছে তার। লাউতোর এলাকায় ২৪ কাঠা জমি তার নামে রয়েছে। সাঁইথিয়ার তালতলা মোড় এলাকায় রয়েছে একটি রাইস মিল। সাঁইথিয়ায় পৈতৃক সম্পত্তি মিলে রয়েছে চারটি বাড়ি। সব মিলিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মালিক হবেন তিনি। এছাড়াও বিয়ে নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তার।