বিধায়ক হয়েও গাড়ি, বাড়ি নয়, মনোরঞ্জন ব্যাপারী এই কারণে কিনলেন টোটো

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : একবার বিধায়কের খাতায় নাম লেখানো মানেই মাসে মাসে খুব কম করে ৮২ হাজার টাকা। পশ্চিমবঙ্গের বিধায়কদের বেতন এবং অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা মিলে এই টাকায় পেয়ে থাকেন তারা। তবে বর্তমানে রাজ্যে যেসকল বিধায়করা রয়েছেন তার মধ্যে যেমন নজর কেড়েছেন বাঁকুড়া শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়ি, ঠিক তেমনই আরও এক বিধায়ককে পাওয়া গেল, যিনিও মাটির মানুষ।

Advertisements

Advertisements

এই অনন্য মানুষটি হলেন বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। এক সময় তিনি রিকশা চালাতেন। আর সেই রিক্সা চালককেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রার্থী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মান সম্মান রেখে তিনি জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন। তবে বিষয়ক হলেও সেই মাটির মানুষটি এখনো মাটির মানুষই থেকে গেছেন, এখনো তার পা মাটিতেই রয়েছে।

Advertisements

সাধারণত দেখা যায় বিধায়ক হওয়ার পরেই বিধায়করা ঝাঁ-চকচকে গাড়ি কেনেন এবং তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায় উর্দিধারী সিকিউরিটি। কিন্তু বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের এই বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী ঝাঁ-চকচকে গাড়ি অথবা সিকিউরিটি নিয়ে ঘোরার পরিবর্তে একটি টোটো কিনেছেন। আর সেই টোটো তিনি কেন কিনেছেন তাও তিনি জানিয়েছেন। তবে সেই টোটো কেনার কারণ জানার আগে একবার মনোরঞ্জন ব্যাপারীর আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

মনোরঞ্জন ব্যাপারী একজন বিধায়কই তিনি একজন লেখকও। তিনি দলিত লেখক হিসাবে পরিচিত। বৃত্তের শেষ পর্ব, জিজীবিষার গল্প, অন্য ভুবন, ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন সহ ২১ টি গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। ভোটে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় তিনি রিকশা চালিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন এবং তার ওই রিক্সাতেই ছিল তাঁর লেখা গ্রন্থগুলি। নিজের জীবন জীবিকা ছাড়াও অন্যান্যদের সাহায্য করার জন্য তিনি এ রিকশা চালিয়েছেন, রান্না করেছেন, বই লিখেছেন। আর তিনি আজ একটি গাড়ি কিনেছেন, তাহলো টোটো।

এই টোটো কেনার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, “বড় গাড়ি কেনার আমার ইচ্ছে নেই, বড় গাড়ি কেনার আমার সখও নেই। কারণ বড় গাড়ি থেকে নেমে আসা মানুষদের গরীব মানুষেরা ভয় পান। ওই বড় গাড়ি দুই ধরনের মানুষের কাছে দূরত্ব তৈরি করে। বড় বড় নেতা, মন্ত্রীরা যখন বড় বড় গাড়ি থেকে চার দশটা সিকিউরিটি নিয়ে নামেন তখন সাধারণ মানুষেরা ভয়ে পালিয়ে যান। তাই আমি এই রকম হতে চাই না। এই সকল কারণের জন্যই আমি এমন একটি বাহন বেছে নিয়েছি যেখানে সাধারণ মানুষ এটিকে চালান, এবং সাধারণ মানুষ এটিতে বসেন।”

বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী আরও জানিয়েছেন, “অন্যদিকে পেট্রোল-ডিজেলের দাম যেভাবে পেরেছে, আগামী দিনে আরও বাড়বে। তাই পেট্রোল লাগবে না সেই জন্যই আমি এই ব্যাটারি চালিত টোটো কিনেছি। এছাড়াও লোন দিয়ে বড় গাড়ি কিনতে পারা যায়। কিন্তু আমাদের এখানকার অর্ধেক জায়গা গ্রাম্য এবং অর্ধেক জায়গা শহর। সেই জায়গায় এই বড় গাড়ি যাবে না। সেই জায়গায় আমি এই টোটো নিয়ে গ্রামের সমস্ত জায়গায় পৌঁছাতে পারবো।”

তবে বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এই টোটো আর পাঁচটার বিধায়কের বড় বড় চারচাকা গাড়ির থেকে কম নয়। কারণ যেমন বিধায়কদের চারচাকা গাড়ির সামনে ‘MLA’ নামাঙ্কিত বোর্ড লাগানো থাকে ঠিক তেমনি মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এই টোটোর সামনের কাঁচেও রয়েছে একই ধরনের নামাঙ্কিত বোর্ড। এটাই হলো অভিনবত্ব।

Advertisements