‘মানুষকে গিনিপিগ নয়, আগে নেতা মন্ত্রীদের বিধানসভা খুলুন’, সুজন চক্রবর্তী

নিজস্ব প্রতিবেদন : কয়েক ঘন্টার মধ্যে লকডাউন শিথিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দুইরকম ঘোষণায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়ে। লকডাউনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সুস্পষ্ট নীতির অভাব স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। যদিও এর জন্য অনেকটাই দায়ী কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির সমন্বয়ের অভাব।
মুখ্যমন্ত্রী গতকাল বিকেলে নবান্নে জানান, ৮ই জুন থেকে রাজ্যের সরকারি বেসরকারি সব পরিষেবাই ১০০ শতাংশ কর্মী নিয়ে স্বাভাবিক কাজ শুরু করবে। এখন আর কিছু করার নেই। করোনাকে পাশবালিশ করে ঘুমোতে হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে রাতেই ট্যুইট করে জানান, রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ কর্মী নিয়ে জন পরিষেবা অব্যাহত রাখতে হবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করবে।

রাজ্য সরকারের এই দুই রকম ঘোষণায় রাজ্যের প্রশাসনিক মহল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সেই বিভ্রান্তি আছড়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতেও। লকডাউনের ভবিষ্যৎ এরাজ্যে কি হতে চলেছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সরকারি অফিস খুলে দেওয়ার কথা বললেও গণপরিবহণ চালু করা নিয়ে রাজ্য সরকারের সুস্পষ্ট কোন নির্দেশিকা নেই। সরকারি, বেসরকারি বাস চলছে অল্প সংখ্যক। ট্রেন, মেট্রো পরিষেবা বন্ধ। কর্মীরা অফিস যাবেন কেমন করে। সেক্ষেত্রে বেসরকারি বাস চালাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার জ্বালানির উপর কর তুলে নেবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়।

মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো বেসরকারি সংস্থাগুলি তাদের কর্মীদের যাতায়াতের ব্যাবস্থা করতে হবে। সেটাই বা কেমনভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রেল নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এমন বক্তব্যে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

একদিকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, কন্টেনমেন্ট জোনে লকডাউন কঠোরভাবে পালন করতে হবে অন্যদিকে রাজ্যে সকল রকম পরিষেবা চালু রাখতে হবে এই দুটি একসঙ্গে কেমনভাবে হওয়া সম্ভব মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী কন্টেনমেন্ট এলাকার বাসিন্দাদের টেক কেয়ার করতে হবে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। একটি প্রশাসনিক কাজ স্থানীয় বাসিন্দারা কেমনভাবে পালন করবে। যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকরা অনবরত এই রাজ্যে প্রবেশ করছে। তাও স্পষ্ট হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

মহঃ সেলিম মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অপরিকল্পিত লকডাউন চাপানোয় মানুষের ক্ষতি হয়েছে, এবার অপরিকল্পিত প্রত্যাহারে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত একপ্রকার বাস্তবতাহীন বলে তিনি জানান।

বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষকে গিনিপিগ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন বিধানসভা খোলার।

সুজন চক্রবর্তী ট্যুইটে লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা- ১লা জুন থেকে মন্দির, মসজিদ ইত্যাদি এবং তারপর ৮ই জুন থেকে সব ১০০ শতাংশ খুলে যাবে। খুলতে তো অবশ্যই হবে। কিন্তু করোনা সংক্রমনের এই সময়ে সাধারণ মানুষকে পরীক্ষার গিনিপিগ করা হচ্ছে কেন? ওগুলো খোলার আগে নেতা-মন্ত্রীদের বিধানসভা তো খুলুন, মাননীয়া।”

দেশজুড়ে যখন চরম অব্যবস্থা চলছে তখন মুখ্যমন্ত্রীর এই বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত রাজ্যের মানুষকে আরও বিপদের মধ্যে ফেলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের ও রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমেই এই জটিল সমস্যার প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।